রাহুল রায়: শিক্ষক বদলি মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) হিমাদ্রী কুমার আরি। শিক্ষকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর দেওয়া শংসাপত্রে খুশি নয় হাই কোর্ট (Calcutta HC)। আদালতেই নতুন শংসাপত্র লেখালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও রেহাই পেলেন না সিএমওএইচ। মঙ্গলবার মামলায় সিএমওএইচ-কে আর্থিক জরিমানাও করেছেন বিচারপতি।
একইসঙ্গে, আগের শংসাপত্র (Certificate) বাতিল করে শিক্ষক রঘুনাথ ঘোষের নতুন করে মেডিক্যাল টেস্ট করতে হবে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেক্ষেত্রে বীরভূমের সিএমওএইচের নেতৃত্বে নতুন মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যদি বীরভূমে সেই ব্যবস্থা না থাকলে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা এসএসকেএম হাসপাতালে ওই পরীক্ষা করতে হবে।
মামলাকারীর আইনজীবী জানান, ২০১০ সালে রাজনগর আনমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেন রঘুনাথ ঘোষ। তাঁর দাবি, বর্তমানে তিনি শারীরিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। নিউরো সমস্যাও তার অন্যতম কারণ। তাও ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে তাঁর চাকরি করতে অসুবিধা হচ্ছে। তাই তাঁর বাসস্থান সংলগ্ন বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের আবেদন জানান। বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ জুন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) চিঠি দিয়ে তাঁর স্থানান্তরের আবেদনও করেন। কিন্তু কোনও কাজ না হাওয়ায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন রঘুনাথ ঘোষ। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের তরফে আইনজীবী সুমিতা সেন দাবি করেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দেওয়া সংশাপত্র প্রভাবিত। তাই তাঁর বদলিতে সায় দেওয়া হয়নি।
এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে চাকরি সংক্রান্ত স্থানান্তরের নিয়মানুযায়ী শারীরিক সমস্যার কারণে স্থানান্তর চাইলে সেই জেলার সিএমওএইচ-এর শংসাপত্র লাগে। এই ক্ষেত্রে রঘনাথ আদালতে শাংসাপত্র পেশ করলেও তাতে খুশি হয়নি হাই কোর্ট। তাই এদিন বীরভূমের (Birbhum) সিএমওএইচকে ব্যক্তিগত হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। আদালতে উপস্থিত সিএমওএইচ হিমাদ্রী কুমার আরির কাছে আদালত জানতে চায়, “শংসাপত্রে মেডিক্যাল পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও বিষয় উল্লেখ করা নেই কেন? রঘুনাথ স্থানান্তরের উপযুক্ত শুধুমাত্র এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে কেন? এটা কোনও মেডিক্যাল শংসাপত্র হিসাবে গণ্য হতে পারে? এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বিচারপতির নির্দেশে এদিন এজলাসে দাঁড়িয়েই নতুনভাবে শংসাপত্র লেখেন সিএমওএইচ। আবারও বিচারপতির প্রশ্ন, “রঘুনাথ বাবুকে কোনও পরীক্ষা না করেই শংসাপত্র দিয়ে দিলেন?”
এদিনই মেডিক্যাল টেস্টের ল্যাব রিপোর্ট চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেই রিপোর্ট দিতে পারেননি হিমাদ্রী কুমার আরি। তার প্রেক্ষিতেই সঠিক মেডিক্যাল সার্টিফিকেট না দেওয়ায় বীরভূমের সিএমওএইচ-কে ২০০০ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানার টাকা তাঁর নিজের পকেট থেকে দিতে হবে বলেই জানিয়েছে আদালত। টাকা পাবে হাই কোর্টের লিগ্যাল এইড সার্ভিস অথরিটি। আদালত জানিয়েছে, নতুন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পাওয়ার পরই রঘুনাথ ঘোষের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.