সন্দীপ চক্রবর্তী: কাকদ্বীপ-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বুলবুল-বিপর্যস্ত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শনের পরদিনই টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হল নবান্নে। সরকারি ছুটি থাকলেও মঙ্গলবার জরুরি ভিত্তিতে টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে কৃষি, স্বাস্থ্য ও পঞ্চায়েত ও সংশ্লিষ্ট ১৪টি দপ্তরের কাছে বিস্তারিত তথ্য চাইলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। আগামী শুক্রবার বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি জানতে রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। এলাকা
পরিদর্শনের পাশাপাশি নবান্নেও বৈঠক করবেন তাঁরা। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে বিধ্বস্ত এলাকায় যাবেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। প্রশাসনিক বৈঠকও করবেন।
অন্যদিকে, বুধবারই বকখালি, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ কিছু এলাকা পরিদর্শনে যাবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, এটা তাঁর সরকারি সফর। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই তাঁর এই সফর। দুর্গতদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের উদ্ধারকারী দল ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ নিয়ে
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আগেই কথা বলেছেন।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যে বসিরহাটের ক্ষতিই সর্বাধিক। তাই বসিরহাটে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের হিসাব, ধানখেত জলের তলায় চলে গিয়েছে। পানের বরাজের ক্ষতি মারাত্মক। একরের পর একর শীতের সবজি নষ্ট হয়েছে। বিদ্যুতের বহু সাবস্টেশন উড়ে গিয়েছে। কয়েক কোটি টাকার চিংড়ি ও অন্য মাছ নষ্ট। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে পর্যটনের। মোটামুটিভাবে ক্ষতির তথ্য জানিয়ে আগামিকালের মধ্যে কৃষি, মৎস্য, পর্যটন, বিদ্যুৎ-সহ ১৪টি দফতরের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সাতটি জেলাও রিপোর্ট দেবে। কেন্দ্রীয় দলকে এই রিপোর্ট দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও ঘুরে দেখবেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। এই প্রতিনিধিদলে মূলত বিভিন্ন দফতরের সচিব, পদস্থ আধিকারিকরা থাকবেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরেও তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠানো হবে। ফসলের কত ক্ষতি হয়েছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলি থেকে সম্পূর্ণ তথ্য হাতে এলেই তা কেন্দ্রকে পাঠানো হবে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ ও মুখ্যমন্ত্রীর সফর প্রসঙ্গে বসিরহাটে বলেন, “আমাদের কাছেও নির্দেশ এসেছে রাজ্যকর্তারা মানুষের পাশে থাকবেন। সবরকম সহযোগিতা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী আসছেন, ভাল কথা। মুখ্যমন্ত্রী গেলে মানুষ সাহস পাবে। টাকা পাবে কি না জানি না। চেক বাউন্স হবে কি না জানি না। আয়লার টাকা এখনও পায়নি। ধান
বিক্রি করলে টাকা ক’জন সময়ে পান? টাকা তো কেন্দ্র দেবে, ক্ষতিগ্রস্তরা পান কী? এটাই বড় প্রশ্ন।”
বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে দু’টি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি টাস্ক ফোর্স রাজ্যস্তরে কাজ করবে, দ্বিতীয়টি জেলাস্তরে। কাকদ্বীপে মুখ্যমন্ত্রী আপাতভাবে জানিয়েছিলেন, বুলবুলের দাপটে রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্পষ্ট করেছিলেন, ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণ করতে হবে। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে
অবিলম্বে এ ব্যাপারে বৈঠকের নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর ২৪ ঘণ্টার আগেই বৈঠক হয়েছে নবান্নে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.