সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা সংক্রমণ রুখতে মরিয়া রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের কাছেও দূরপাল্লার ট্রেন ও আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। তা তো মানা হচ্ছেই না। উলটে আন্তরাজ্য ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে যাত্রী বিশেষ করে শ্রমিকদের বিনা চেকআপেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে এ রাজ্যের শ্রমিক ও তাঁর পরিবারকে। যা নিয়ে এবার ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যাঁরা ভিনরাজ্য থেকে আসছে, তাঁদের তো ফেরাতে পারি না। তাঁরা আমাদের ভাই। কিন্তু রেল ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছে। সমস্ত রাজ্য খালি করে বাংলায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। কাউকে কোনওরকম পরীক্ষা ছাড়াই পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সরকারের অনুরোধও শুনছে না। আজকেও অনুরোধ করা হয়েছে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল করার।” রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি একা আর কত সহ্য করব?”
এভাবে ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের বাংলায় পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকেও তিনি সমর্থন করছেন না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “এর আগেও দেখেছি বোমা বিস্ফোরণের সময়ও একই কাণ্ড হয়েছিল। এখন এই অবস্থায় তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছে। রোগ হলেই যদি তাড়িয়ে দেবে তবে সেখানে কাজ করে আর কী লাভ? যখন ভাল থাকবেন, তখন সেখানে কাজ করতে নিয়ে যাবে। আর এখন তাড়িয়ে দেবে!” তাঁর কথায়, “আমি এখনও বলছি, বাংলার মার্কেট ভাল। শ্রমিকরা এখানে কাজ করুন। আমি মানবিকভাবে করতে চাই, তাই করে যাচ্ছি।”
আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। তাও স্থগিত রাখা হচ্ছে। উলটোদিকে কিছু পরিষেবার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের গাফিলতি নজরে এসেছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তুত, তৃতীয় পর্যায়ে এই করোনার সংক্রমণ ‘কমিউনিটি স্প্রেড’—এর দিকে গেলে তার ফলাফল ভয়াবহ হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাই বলেছেন, পরিস্থিতি এখন তৃতীয় সপ্তাহে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এর পরই পরিস্থিতি আরও খারাপ আরও ভয়াবহ হতে পারে। চতুর্থ ও পঞ্চম সপ্তাহের দিকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরও সতর্কতা প্রয়োজন। তাঁর পরামর্শ, “কেউ অসুস্থ বোধ করলে বাড়ির মধ্যে তাঁকে আলাদা করে রাখুন। ঘর থেকে বেরোবেন না। আলাদা ঘরে রাখুন। নয়তো মশারির মধ্যে রাখুন। তাঁর ব্যবহারের সাবান, বালতি, থালা কাউকে ছুঁতে দেবেন না। এটা অস্পৃশ্য কোনও বিষয় না। স্রেফ সতর্কতা।”
রাজনৈতিক সংগঠনগুলিও কর্মসূচি বাতিল করেছে। কিন্তু বিজেপি তাদের বেশ কিছু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তা নিয়েও নাম না করেই তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “কিছু সংগঠন কথা না শুনে এখনও জমায়েত করে যাচ্ছে। বাঁচলে তো ধর্ম হবে। কালীঘাট, মতুয়া সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে সবটাই আমরা অনুরোধ করেছি পুণ্যার্থীদের আসার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মানতে। আমি তো বন্ধ করে দিতে বলছি না। অন্যত্র তো বন্ধ করে দিচ্ছে। আমি বলছি অল্প করে করুন।”
এই পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণে স্যানিটাইজার ও মাস্ক প্রয়োজন পড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের জেরে চাহিদা বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে স্যানিটাইজার আর মাস্ক আমরা তৈরি করছি। কিন্তু আগে তাদের হাসপাতালে পাঠাতে হবে। তার পর সাফাইকর্মী, পরে পুলিশের কাছে যাবে। একেবারে শেষে তাদের বাজারে ছাড়া হবে।
তবে ঘরোয়া উপায়ে হাত—মুখ পরিষ্কার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, “স্যানিটাইজার না থাকলে সাবান দিয়েই হাত ধুন। আমি নিজে তিনবার সাবানে হাত ধুয়ে নিচ্ছি। দু’বার স্যানিটাইজার দিচ্ছি। এ সময় কাঁচা সবজি খাবেন না। সেদ্ধ করে খান। এমনিতেই এই সময়টা আমরা নিম-বেগুন খেতাম ছোটবেলায়। সেসব খান। উচ্ছে খান। শরীরের ইমিউনিটি বাড়ান। প্রোটিন খান। তার সঙ্গে শর্করা খান।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.