কৃষ্ণকুমার দাস: কোভিডের টিকা নিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বদলে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ছবি দেওয়া সার্টিফিকেট পাবেন রাজ্যবাসী। বিশেষ করে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী যে সমস্ত নাগরিক টিকা নেবেন তাঁদের এই সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ মেসেজ। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে দেওয়া ওই শংসাপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পাশাপাশি লেখা থাকবে, “সজাগ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।” তবে তৃতীয় পর্যায়ের টিকা চলার সময় ৪৫ উর্দ্ধ যাঁরা টিকা নেবেন তাঁদেরও কেন্দ্রের কো-উইন অ্যাপের (Co-WIN) মাধ্যমে মোদির সার্টিফিকেটের পাশাপাশি মমতার ছবির শংসাপত্রও দেবে রাজ্য সরকার।
শুক্রবার কোভিড কমিটির বৈঠক শেষে কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু ১৮ থেকে ৪৪ পর্যন্ত বয়সীদের টিকা দিচ্ছে না, রাজ্য সরকার নিজের টাকায় কিনে দিচ্ছে তাই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও মেসেজ থাকবে। তবে টিকাকরণের (Corona Vaccine) সমস্ত তথ্য রাজ্য সরকারই কো-উইন অ্যাপে তুলে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া এই সার্টিফিকেটে কোভিশিল্ড টিকার ব্যাচ নম্বর, কো-উইন অ্যাপের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও কবে, কোথায় কোন সংস্থা টিকা দিয়েছে, সবই থাকবে।” এদিন পর্যন্ত শুধু কলকাতার ১৪৪ ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে সরকারিভাবে টিকা দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভা (West Bengal Assembly Elections) ভোটে মোদিকে টেক্কা দিয়ে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে আনার পর এবার মমতার ছবি দেওয়া কোভিড সার্টিফিকেট কার্যত আরও একবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলার নিরব প্রতিবাদ বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল। কেন্দ্রীয় সরকার চাহিদা মতো ভ্যাকসিন না দেওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে রাজ্যের টাকায় টিকা কিনে আনছেন। কলকাতা-সহ রাজ্যে বর্তমানে ‘সুপার স্প্রেডার’দের যে টিকাকরণ চলছে সেটা পুরোপুরি রাজ্যের অর্থেই ক্রয় করা ভ্যাকসিন। সুপার স্প্রেডার গোষ্ঠীতে আছে হকার, দোকানি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহণকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক। মুখ্যমন্ত্রী বণিকসভার বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন খুব শীঘ্রই পরিচারিকাদেরও সম্পূর্ণ বিনাখরচে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কলকাতা পুরসভা ঘোষণা করেছে, ক্রয় করা ভ্যাকসিন সময়মতো পৌঁছে গেলে আগামী সপ্তাহ থেকেই ১৮ উর্দ্ধ সমস্ত নাগরিককেই টিকা দেওয়া শুরু হবে। শহরের ১৪৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেগা ভ্যাকসিন সেন্টার ও ‘ভ্যাকসিন অন হুইলসে’ও তখন ১৮ উর্দ্ধ যে কেউ শুধু আধার কার্ড নিয়ে গেলেই টিকা পাবেন। কেন্দ্রের পাঠানো টিকা প্রথমে ৬০ উর্দ্ধ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪৫ উর্দ্ধ নাগরিকদের বন্টন করা হয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার দিন কয়েক পর থেকেই হকার, পরিবহণকর্মী ও শিক্ষকদের ‘সুপার স্প্রেডার’ গোষ্ঠীতে ভাগ করে ১৮ উর্দ্ধদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসে শিবির করে যেমন টিকাকরণ চলছে তেমনই নির্মাণকর্মীদেরও বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এদিন মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ জানান, “তৃতীয় পর্যায় আর কোনও গোষ্ঠী ভাগ থাকবে না। শুধু আধার কার্ড নিয়ে গেলেই রাজ্যের ক্রয় করা কোভিশিল্ড টিকা নাগরিকরা পেয়ে যাবেন।” নবান্ন সূত্রে খবর, ১৮ উর্দ্ধরা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর স্বাস্থ্যদফতর থেকে টিকা নেওয়া ব্যক্তির মোবাইলে একটি মেসেজ পাঠাবে। সেখানে একটি লিংক থাকবে। ওই লিংকে ক্লিক করলেই মুখ্যমন্ত্রীর রঙিন ছবি দেওয়া টিকার সার্টিফিকেট ডাউনলোড হয়ে যাবে। এজন্য স্বাস্থ্যদপ্তর একটি বিশেষ পোর্টাল তৈরি করেছে। কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ১৮-ঊর্ধ্বদের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নাম বুকিং করতে হবে নাকি সেন্টারে গেলেই মিলবে তা পুরসভা শীঘ্রই ঘোষণা করবে। মোদির ছবি দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের শংসাপত্রে টিকা যিনি নিচ্ছেন, তাঁকে একটা ইউনিক নম্বর দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া যে সার্টিফিকেট দিচ্ছে সেখানে এমন নম্বর থাকছে না। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ কবে নেওয়া হবে, তাও রাজ্যের শংসাপত্রে উল্লেখ থাকবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.