Advertisement
Advertisement

Breaking News

মমতা

‘সাতবার এমপি হয়ে আমি আমার পরিচয় দেব?’ NRC-CAA নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ মমতার

সংখ্যার জোরে আইন করলেও মানুষ মানবে না, হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর।

CM Mamata Banerjee slams Centre on NRC and CAA
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:December 17, 2019 5:12 pm
  • Updated:December 17, 2019 5:37 pm  

স্টাফ রিপোর্টার: আমরা সবাই নাগরিক। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের মধ্যে আমরা থাকব। দেশের উপর জুলুম করতে দেব না। বাংলায় এনআরসি করতে দিচ্ছি না। ক্যাব করতে দিচ্ছি না। বাংলা থেকে কাউকে তাড়াতে দেব না। দেশ ভাগ হতে দিচ্ছি না। দেব না। সব ধর্ম আমার, আপনার। সর্ব ধর্ম সমন্বয় সবার- এই শপথ নিয়েই শুরু হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি। এর পরই শঙ্খধ্বনি। মিছিল শুরুর মুখে মমতা বলেন, “সংখ্যার জোরে আইন পাস করানো যায়। সংবিধান মেনেছে কি মাননি এটা দেখতে হবে। মানুষের সমর্থন না পেলে আইন কার্যকরি হয় না।”

প্রথমদিন পথে নেমেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন এই আইন বাংলায় প্রয়োগ করতে হলে তাঁর মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে। কেন্দ্র তাঁর সরকার ফেলে দেয় দিক, তবু মাথা নত করবেন না তৃণমূলনেত্রী। সেই পথেই আজ, মঙ্গলবার যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ড থেকে ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত হয় তাঁর পদযাত্রা। প্রতিবাদের পথে নেমে আরও একবার মমতা বুঝিয়ে দিলেন তাঁর পথ কতটা অনড়। মমতা তার আগেই বলেছেন, “লোকসভায় যখন বিল ওঠে, কাউকে জানতে দেওয়া হয়নি। বিল এনে মধ্যরাতে পাস। একদিন পর আমাদের সাংসদরা গিয়েছিল। তাই জানতে পারে। রাজ্যসভায় প্রতিবাদ জানিয়েছে।” তাঁর কথায়, “বিজেপি ভাবছে দেশ দখল করে নিয়েছি। সংবিধান মেনে এই আইন পাস করানো হয়নি।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: NRC, CAA’র পর NPR-এর কাজও স্থগিত রাজ্যে, নবান্ন থেকে জারি নির্দেশিকা]

সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, “একজন বলছেন, পোশাক পরে চেনা যায় কারা আন্দোলন করছে। এটা কোনও কথা? মাথায় টুপি পরলেই সবটা বোঝা যায়?” তাঁর কথায়, “আমার পরিচয় জানতে চাইছে। সাতবার এমপি হয়ে, দু’বার এমএলএ হয়ে আমি আমার পরিচয় দেব? মা-বাবার জন্ম বলব? শুধু ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি। কখনও মন্দির গড়ছে, মসজিদ ভাঙছে। কখনও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের বাদ দেবে।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “বিজেপির চক্রান্তের শেষ নেই। বিজেপি টুক করে একটা আগুন লাগিয়ে চলে যাবে। আগুনটা নিভিয়ে দেবেন। দিয়ে যে ধরিয়েছিল তাকে ধরিয়ে দেবেন।”

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, এই আইন বেআইনি। এভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও আইন করে দেশের মানুষকে তাড়ানো যায় না। এর বিরুদ্ধেই মমতার প্রতিবাদ। তাঁর দাবি, অবিলম্বে ক্যাব এবং এনআরসি বাতিল করতে হবে। যতক্ষণ না তা হবে, প্রতিবাদের পথ থেকে সরবেন না মমতা। রাস্তাই তাঁকে পথ দেখাবে। রাস্তাই আন্দোলনে রাখবে তাঁকে। এই দেশ সবার। ঐক্যবদ্ধ ভারতের পক্ষে তাঁর লড়াই। পরিস্থিতি যখন এমন, তার মধ্যেই মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জায়গায় আগুন জ্বলেছে। ট্রেন-বাস পুড়েছে। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যেই দূর পাল্লার ট্রেন অবিলম্বে চালু করার দাবি কেন্দ্রের সরকারকে জানিয়েছেন মমতা। এ ধরনের ঘটনা রীতিমতো গুন্ডামি বলেই মনে করছে রাজ্য ও পুলিশ প্রশাসন। তাদের কড়া হাতে দমনের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি বাইরে থেকে টাকা দিয়ে রাজ্যে অশান্তি ছড়াতে চাইছে। মুসলিমদের বদনাম করতে চাইছে। আর সেই কাজে রাজ্যের বাইরে থেকে মদত দিচ্ছে কিছু সংগঠন। তাদের স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলে দিয়েছেন, প্রমাণ তাঁর হাতে আছে। এভাবে যেন আগুন জ্বালানো না হয়। একইসঙ্গে মুসলিম-সহ অন্য সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে মিছিল সঙ্গে নিয়ে মমতা বার্তা দিতে চেয়েছেন তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখতে। প্রত্যেকে সমস্বরে তাদের বিশ্বাস রাখার কথা জানিয়েও দিয়েছে।

মিছিলে হাজির হয়েছিলেন গৌতম ঘোষের মতো চিত্র পরিচালক থেকে অভিনেতা, নেতা-মন্ত্রী প্রত্যেকে। রয়েছেন বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টরা। গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, “আমি কোনও দলের লোক নই। এসেছি স্বতস্ফূর্তভাবে। এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আমাদের হবেই। লড়াই, আন্দোলন আমাদের করতেই হবে। ধর্মের ভিত্তিতে কোনও নাগরিকত্ব আইন পাস হতে পারে না।” বারবার শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর একটাই দাবি, বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ করতে দেব না। প্রত্যেকের গায়ে ব্যাজ। তাতেও লেখা ‘নো এনআরসি, নো ক্যাব’। মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, একটা নির্বাচিত দল হয়ে তৃণমূলের অধিকার আছে কোনও আইনকে বেআইনি মনে হলে তা না মানার সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারই প্রেক্ষিতে আজ দ্বিতীয় দফার প্রতিবাদ মমতার। তাঁর বার্তা, ধর্ম যার যার নিজের। এই দেশ সকলের।

শুধু মহামিছিল নয়। অসংখ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এ মিছিল গোটা শহর, রাজ্য তথা দেশের কাছে আবেদন। তাঁর আবেদন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের বলছি এই লড়াই সংখ্যালঘুদের নয়। এ লড়াই মানবিকতার। এ লড়াই দেশের। এ লড়াই মানুষের স্বার্থে। এ লড়াই তাই তিনি চালিয়ে যাবেন। ততক্ষণ রাস্তায় থাকবেন, যতক্ষণ না এই আইন প্রত্যাহার হচ্ছে। গতকাল উত্তর কলকাতাকে ভিত্তি করে মহামিছিল ছিল মমতার। আজ দক্ষিণ কলকাতা। আগামিকালের মিছিল আরও দীর্ঘ হতে চলেছে। হাওড়ার ময়দান থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত যাবে সেই মিছিল। শুধু এই তিনদিন নয়, আন্দোলন চলবে ধারাবাহিকভাবে। বড় মিছল শেষে রাজ্যজুড়ে ব্লকে ব্লকে কর্মসূচি হবে। আগামী ২০ ডিসেম্বর তৃণমূল ভবনে সাংসদ-বিধায়কদের ডেকেছেন মমতা। সেখানেই পরের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement