অভিরূপ দাস: দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে চায় ইংল্যান্ডের শতাব্দীপ্রাচীন শিক্ষাঙ্গন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। সোমবার আমজনতার সঙ্গে এই খবর ভাগ করে নিয়েছেন তিনি নিজেই। হরিশ মুখার্জি রোডের কুণ্ডুপাড়ায় মন্মথনাথ বয়েজ অ্যান্ড গার্লস স্কুল। যোগমায়া দেবী কলেজে পড়ার সময় এখানেই ইতিহাস, অঙ্কের দিদিমণি ছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারদশক আগে তিনি ইতিহাস-সংস্কৃত-ইংরেজি পড়াতেন! সোমবার সেই স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে সুখবর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার জীর্ণ পুরনো স্কুলকে নতুন সাজে ফিরিয়ে দেওয়ার মঞ্চে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন মমতা। ভালো ক্লাসরুম ছিল না। অভাব ছিল ইংরেজি শিক্ষকের। স্কুলে পড়িয়ে মাসে ষাট টাকা মাইনে পেতেন। বাঙালিরা শুধু বাংলা কেন জানবে? ইংরেজিও বলতে হবে সমানতালে। মমতা জানালেন, ”স্মৃতির সরণিতে দাঁড়িয়ে আমি সবার সঙ্গে একটা খবর ভাগ করে নিতে চাই। গতকালই আমার কাছে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের (Oxford University)নিমন্ত্রণ এসেছে। তারা আমাকে বক্তৃতা দিতে ডেকেছে।” একইসঙ্গে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের ছাত্রছাত্রীরাও দেখা করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। এই প্রথম নয়। এর আগেও অক্সফোর্ডের আমন্ত্রণ পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রের অসহযোগিতায় তাঁর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে এবার তিনি যাচ্ছেন। মমতার কথায়, ‘‘এবার আমি অক্সফোর্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ, আমি তাদের উপেক্ষা করতে চাই না।’’
আগ্রহী শ্রোতাদের মমতা শুনিয়েছেন, পুরনো সেই স্কুলকে নতুনভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে গল্প। দু-তিন বছর আগের কথা। পুজোয় মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লঝঝড়ে বাড়িটি দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘‘এই যে ভাঙাচোরা বিল্ডিংটা দেখছিস, এই স্কুলটায় আমি একসময় পড়াতাম। শুনছি স্কুলটা আর থাকবে না। নতুন করে কিছু ভাবা যায় কি?’’মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন ফিরহাদ। জমি ছিল না স্কুলের। আলাদা করে চারকাঠা জমি কিনে নিয়ে, ৫ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হল পাঁচতলা স্কুলবাড়িটা। নতুন নাম মডার্ন হাই স্কুল। তার উদ্বোধনেই সোমবার কলেজ জীবনের দিনগুলিতে ফিরে গেলেন মমতা। মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছবির মতো বলেছেন পুরনো সেই দিনের কথা। ‘‘এই স্কুলে যখন পড়াই তখন আমার ফার্স্ট ইয়ার। মাসমাইনে ছিল ষাট টাকা। বাবা মারা গিয়েছেন। হাতখরচা চালানোর জন্য একটা কাজের প্রয়োজন ছিল।’’
সকালবেলা কলেজ পড়তেন। কলেজ শেষে স্কুলে। চল্লিশ বছর আগের সহকর্মী প্রতিমা-স্বদেশদার মনে পড়ে গিয়েছে মমতার। ‘‘ছোটবেলার একটা স্মৃতি তো থাকেই। রোজ আসতাম হাঁটতে হাঁটতে। আমি এখানকার সমস্ত রাস্তার অলিগলি চিনি।’’
নতুন স্কুলে ইতিমধ্যেই ন জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এই স্কুলকে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরতে চান মমতা। তার জন্য বারোটি অত্যাধুনিক ক্লাস রুম, একটি ই-লার্নিং রুম, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি নিয়ে স্কুল এখন টেক্কা দেবে যে কোনও ঝাঁ-চকচকে বেসরকারি স্কুলকেও।
এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি। এসেছিলেন ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান। নতুন স্কুল আর ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি, দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্রুত মউ স্বাক্ষরের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে, এদিন স্কুল ঘুরে দেখেন মমতা। লিখে এসেছেন তাঁর শুভেচ্ছাবার্তাও। সবশেষে স্কুলের জন্য ছিল নতুন উপহার। সামনের মাঠটা অগোছালো। তাও দ্রুত সাজিয়ে দেওয়ার কথা দিয়েছেন মমতা। নির্দেশ দিয়েছেন মেয়রকে ‘‘ববি এত কিছু যখন করেছিস। এটাকেও সুন্দর করে সাজিয়ে দে।’’ খেলার মাঠের সঙ্গে মাল্টিজিম! বাসিন্দারা বলছেন, স্রেফ নামে নয় আমাদের ভবানীপুর মডার্ন স্কুল এখন সত্যিই মডার্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.