সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলিশি গাফিলতির কথা মেনেই নিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু তারপরও নাম উল্লেখ না করে সন্দেশখালিতে অশান্তির দায় ঠেলে দিলেন বিজেপির উপর৷ সোমবার নবান্নে জিএসটি বৈঠক সেরে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর আরও দাবি, বাংলা শান্তিতেই আছে, ভাল আছে৷ এখানে অশান্তি লাগানোর সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হবে৷
রাজনৈতিক সংঘর্ষে এখনও উত্তপ্ত বসিরহাটের সন্দেশখালি৷ ন্যাজাটের ভাঙিপাড়া গ্রামে এখনও নিহতদের সংখ্যা নিয়ে চাপানউতোর জারি রয়েছে৷ আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষজন৷ এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল সবমহল৷ সোমবার এনিয়ে অনেক কথা বললেও, প্রকৃত অর্থে সেই প্রতিক্রিয়া রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানসুলভ ছিল না৷ একবার বললেন, রাজ্যের কোথাও কোথাও পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না৷ সেসব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর পরমুহূর্তেই ঘটনায় দায় কার্যত চাপালেন বিজেপির কাঁধে৷ বললেন, ‘বিজেপি উসকানি দিয়ে অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করছে৷’ যে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এত বিতর্ক, তাও এড়িয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর কাছে তথ্য অনুযায়ী, সন্দেশখালিতে নিহতের সংখ্যা দুই৷ অথচ প্রথমদিন থেকেই স্পষ্টভাবে তৃণমূলের ১ জন এবং বিজেপির ২ জন অর্থাৎ মোট ৩ জনের মৃত্যুর খবর জানা সকলের৷ যদিও বিজেপির তরফে দাবি,শুধুমাত্র তাঁদেরই ৪ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে৷ ফলে মুখ্যমন্ত্রীর বয়ানের পরও মৃতের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল৷
মুখ্যমন্ত্রী আরও বললেন, বাংলা ভাল আছে৷ এরাজ্যে মেয়েরা নিরাপদে রাতবিরেতে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে পারে৷ কিন্তু তাঁর এই দাবি এই মুহূর্তে কতটা সত্যি, তা নিয়ে বিস্তর সংশয় জাগে৷ শুধু এখনই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরপরই এরাজ্যে দেখেছে পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি, গাংনাপুর, কাটোয়ার গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড৷ পার্ক স্ট্রিটে সুজেট জর্ডনের ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে সেসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল চমকে ওঠার মতো৷ ওই ঘটনাকে তিনি ‘ছোট ঘটনা’ হিসেবেই বর্ণনা করেছিলেন৷ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে গিয়ে সরে যেতে হয়েছিল রাজ্যের অন্যতম দক্ষ আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনকে৷ সেসবের পর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল৷ ২০১৬এ বিপুল জনসমর্থন পেয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে মমতা সরকার৷ কিন্তু একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত, সেই প্রশ্নের অবকাশ এখনও আছে৷ এসবের পরও তাঁর দাবি, মেয়েরা এখানে নিরাপদে পথেঘাটে চলতে পারে৷ এনিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে কোনও কোনও মহলে৷
লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলের নিরিখে এরাজ্যে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি৷ ৪২টির মধ্যে ১৮টি আসনই তাঁদের দখলে গিয়েছে৷ একদিন যে লড়াই কিছুটা হলেও চোরাগোপ্তা ছিল, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর সেটাই এসে গিয়েছে প্রকাশ্যে৷ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই মুহূর্তে প্রশাসনিক প্রধানের চেয়েও সম্ভবত বেশি মনসংযোগ করছেন তাঁর রাজনৈতিক সংগ্রামে৷ তাই প্রতি মুহূর্তে বিজেপিই তাঁর শত্রুপক্ষ হয়ে উঠছে৷ তবে এই পরিস্থিতিতে সন্দেশখালির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাটাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান লক্ষ্য হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত আপামর রাজ্যবাসীর৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.