স্টাফ রিপোর্টার: এই স্কুলের পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস। এখান থেকেই শুরু নারীশিক্ষার উড়ান, ১৮৪৯ সালের ৭ মে। জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের লাগানো সেই চারাগাছ আজ মহীরুহ। রাজা দক্ষিণরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বৈঠকখানা হয়ে হেদুয়ার পশ্চিমপাড়ে গিয়ে ক্যালকাটা ওমেনস স্কুল হয়েছে বেথুন কলেজিয়েট স্কুল। মহানির্বাণতন্ত্র ঘেঁটে এই স্কুলের প্রথম সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কন্যাকেও যত্নপূর্বক শিক্ষাদানে পালন করার বীজমন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন এই শিক্ষালয়েই। এই স্কুল ক্যাম্পাসই দেশের প্রথম স্নাতক তথা মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী বসু গঙ্গোপাধ্যায়কে উপহার দিয়েছে।
সম্প্রতি ১৭৫ বছরে পা দিয়েছে বেথুন স্কুল (Bethune School)। দেশের প্রথম সরকারি বালিকা বিদ্যালয়কে নারীশিক্ষায় ধারাবাহিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বঙ্গরত্ন’ (Bangaratna) পুরস্কার দিলেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্যর হাতে ‘বঙ্গরত্ন’ পুরস্কার দেন মুখ্যমন্ত্রী। বঙ্গরত্নের ২ লক্ষ টাকা ছাড়াও স্কুলের উন্নয়নে শিক্ষা দপ্তরের তরফে ১০ লক্ষ টাকা অনুদানের কথাও ঘোষণা করেন মমতা। মনে করিয়ে দেন স্কুলের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার না হলে সমাজ এগোতে পারে না। এই স্কুলের প্রথম সম্পাদক বিদ্যাসাগর মহাশয়ই নারীশিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছিলেন, বিধবাবিবাহের প্রচলন করেছিলেন।’’
এর পর বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সতীদাহ প্রথা নিবারণ করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। সংবিধানের প্রণেতা আম্বেদকর এখান থেকেই পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। জয় হিন্দ স্লোগান দিয়েছেন আমাদের নেতাজি। বন্দে মাতরম লিখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দুটো দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছিলেন রবি ঠাকুর। দাঙ্গার সময় গান্ধীজি ‘ফ্রিডম অ্যাট নাইট’ পালন করেছিলেন এই বাংলায়, বেলেঘাটার বাড়িতে বসে।
বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা যখন বাংলার বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করছেন, বাংলাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছেন, তখন মুখ্যমন্ত্রীর এই গৌরবময় বঙ্গ ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেওয়া যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এখন মেয়েরা ঘর সামলায়, প্লেনও চালায়। ব্যাংক চালায়, দেশও চালায়। আমাদের মেয়েরা আজ কন্যাশ্রী, রূপশ্রী।’’ মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘দেশ এখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালন করছে। আর আপনারা ১৭৫ বছর! দেখবেন, বেথুন স্কুল একদিন বিশ্বে একনম্বর হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শিল্প-বাণিজ্য, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বি পি গোপালিকা, পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ অন্যরা। দর্শকাসনে ছিলেন একঝাঁক প্রাক্তনী। সাংসদ দোলা সেন, আবৃত্তিকার ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রা বসু প্রমুখ। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বেথুন স্কুলের ইতিহাসের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র ও কফি টেবিল বুকও প্রকাশ করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.