ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: দেশের অর্থনীতির ময়দানে যোজনা কমিশন আপাতত অতীত। অর্থনীতি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত, নীতি নির্ধারণের ভার এখন নীতি আয়োগের (Niti Aayog) উপর। ২০১৪এ মোদি সরকার দেশের ক্ষমতায় আসার পর যোজনা কমিশনের অবলুপ্তি ঘটিয়ে তৈরি করেছে নীতি আয়োগ। এবার সেই যোজনা কমিশনকেই ফের রাজ্যের পরিসরে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। সোমবার, নবান্নে নেতাজি কমিটির বৈঠকে তাঁর ঘোষণা, ”কেন্দ্র তো যোজনা কমিশন তুলে দিয়েছে। আমরা বাংলা প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করব।” এই কমিশনের শীর্ষে থাকবেন নোবেলজয়ী অর্থবনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, তাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ বছর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhas Chandra Bose) ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। তার আগে নেতাজি কমিটির প্রথম বৈঠকে কেন এই প্ল্যানিং কমিশনের ভাবনা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর? আসলে জাতীয় যোজনা কমিশনের প্রাথমিক ধারণা এবং প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নিজস্ব ভাবনা ছিল ‘দেশনায়ক’ সুভাষচন্দ্র বসুর। ১৯৩৮ সালে তিনি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছিলেন। ভারতকে ইংরেজ শাসনমুক্ত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তিনি প্ল্যানিং কমিশনের কথা ভেবেছিলেন। স্বাধীনতার পর যদিও জওহরলাল নেহরুর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল জাতীয় যোজনা কমিশন, যার সঙ্গে নেতাজির পরিকল্পনার কোনও মিল ছিল না। তারপর মোদি সরকারের আমলে যোজনা কমিশন অবলুপ্ত হয়েছে।
এখন নেতাজির সেই ভাবাদর্শেই বাংলায় প্ল্যানিং কমিশন তৈরি করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে মাথায় রেখে কমিশন গঠনের কথা তিনি এদিনের বৈঠকে জানিয়েছেন। সেইমতো অমর্ত্য সেনের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা।
এছাড়া নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে রাজ্য সরকারের নানা পরিকল্পনার কথাও এদিনের বৈঠকে আলোচিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম স্কুলগুলিতে ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ গঠন। পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি এই বাহিনীর প্রশিক্ষণ হবে পুরোপুরি NCC ক্যাডেটদের মতোই। পুলিশ তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। নেতাজির বিখ্যাত বই ‘তরুণের স্বপ্ন’ বিভিন্ন ভাষায় ছাপিয়ে স্কুলগুলিতে তা দেওয়া হবে পড়ানোর জন্য। তৈরি হবে ‘নেতাজি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’। নিউটাউনে তৈরি হবে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’এর স্মৃতিসৌধ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৈরি কমিটির ভার দেওয়া হয়েছে নেতাজি পরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুকে।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে আরও জানিয়েছেন, নেতাজি জয়ন্তীতে শ্যামবাজার থেকে রেড রোড পর্যন্ত মহামিছিল হবে। নেতাজির জন্মমুহূর্ত ঠিক দুপুর ১২.১৫ নাগাদ শঙ্খ বাজিয়ে শ্যামবাজারে নেতাজি মূর্তির পাদদেশ থেকে তার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজেই মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন। ওইদিন রাজ্যে পালিত হবে ‘দেশনায়ক দিবস’। এদিকে, ওইদিন এ রাজ্যে আসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে রাজ্য সরকারের নেতাজি জয়ন্তী পালনের কর্মসূচিতে শেষ মুহূর্তে বদল হতেও পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.