সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নোট বাতিলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় ফের সুর চড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মোদি সরকারকে তুলোধোনা করলেন তিনি৷ জানালেন, মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করা হয়েছে৷ দেশকে ভাসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে বসে আছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
একেবারে গোড়া থেকেই এই সিদ্ধান্ত মানুষের স্বার্থবিরোধী বলে সরব হয়েছিলেন তিনি৷ এদিন শরৎ বোস রোড ও চৌরঙ্গি এলাকার একাধিক ব্যাঙ্ক ও এটিএম ঘুরে দেখেন তিনি৷ কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও৷ শোনেন তাঁদের দুর্ভোগের কথা৷ কালো টাকা না থাকলেও যেরকম হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে তা মুখ্যমন্ত্রীকে দ্বিধাহীনভাবে জানান সাধারণ মানুষ৷ খুচরো সমস্যা নিয়েও যে নাজেহাল হতে হচ্ছে সে নালিশও করেন অনেকে৷ তার পরেই নবান্নে পৌঁছে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ জানান, “মানুষের সঙ্গে জালিয়াতি করা হয়েছে৷ রাতারাতি একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কোনও পরিকল্পনা নেই৷ শুধু শাকদলের ঘনিষ্ট যারা তারাই খবর পেয়েছে৷ তাদের কথা কাগজেও বেরিয়েছে৷ কালো টাকা রোখার নামে এটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক না সার্জিক্যাল অ্যানার্কি?”
কালো টাকা যে এতে যে রোখা যাবে না তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, “যারা কালো টাকার কারবারী তাদেরই এতে আরও সুবিধা হচ্ছে৷ ১ শতাংশ লোকের জন্য, ৯৯ শতাংশ মানুষকে ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে৷ যাদের কালো টাকা আছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল? অন্যের ভুলের সাজা আর একজনকে দেওয়া হচ্ছে৷” মোদির সিদ্ধান্তকে ‘ব্ল্যাক ডিসিশন’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত ভয়ংকর ও বিধ্বংসী৷ দেশের অর্থনীতি এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷ জানান, “কোথাও ব্যবসা হচ্ছে না৷ কত যে ক্ষতি হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই৷” সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতি দিয়ে এ ক’দিনের ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত করে দেখা উচিত বলেও দাবি তোলেন তিনি৷
মোদির ‘তুঘলকি’ সিদ্ধান্তকে তুলোধোনা করে এদিন বিজেপি সরকার সংসদীয় গণতন্ত্রে আস্থা রাখে না বলেও অভিযোগ আনেন মমতা৷ জানান, “সংসদে প্ল্যান অফ অ্যাকশন নিয়ে আলোচনা করে তবে যেটি কার্যকর করা উচিত ছিল৷ কিন্তু এরা তো সংসদে বিশ্বাসই করে না৷ কারও কথা শোনে না৷ কাউকে তোয়াক্কাও করে না৷ একনায়কতন্ত্র চলছে দেশে৷ সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷”
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যে সংসদে কোমর বেঁধে বিরোধিতায় নামবে তৃণমূল কংগ্রেস, এদিন স্পষ্টতই সে কথা জানিয়ে রাখলেন মমতা৷ এমনকী বিজেপি বিরোধিতায় মহাজোটেরও ইঙ্গিত দিলেন তিনি৷ বৃহত্তর স্বার্থে সিপিএম ও কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামারও ইঙ্গিত দিলেন তিনি৷ অন্যান্য বিরোধী দলের কাছে এ আবেদন জানান তিনি৷ পাশাপাশি দলের নেতাদের এ নিয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলারও নির্দেশ দেন৷
দেশকে ভাসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশে বসে দেশবাসীকে হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ মমতার৷ ৩০ ডিসেম্বরের পর কালো টাকা রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন মোদি৷ সে প্রসঙ্গ তুলে মমতার তোপ, “কী করবেন মোদি? মানুষের উপর গুলি চালিয়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবেন?” বস্তুত এই প্রথম নীরবতা ভেঙে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি৷ এবং সংসদে যে এ নিয়ে সরব হবে তৃণমূল তাও বলে রাখলেন৷ তাঁর দাবি, পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যদি পরিকল্পনাই থাকত, তাহলে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কেন পরিস্থিতি ঠিক হতে আরও সময় লাগার কথা বলছেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷
এই বিরোধিতার জেরে যদি তাঁকে বিপাকে পড়তে হয় তাও তিনি ভয় পান না বলেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মানুষের ভালর জন্য বরাবর লড়াই করতে তিনি তৈরি জানিয়ে বলেন, “যদি আমাকে জেলে পুরে দেওয়া হয়, আমার বদনাম করা হয়, এমনকী আমাকে গুলি করে খুনও করা হয় তাও আমি প্রতিবাদ করা থেকে পিছপা হব না৷” দেশকে ভালবাসার নামে দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷ মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে যাঁরা দাঙ্গার রাজনীতি করেন, তাদের তিনি ভয় পান না বলেও সাফ জানিয়ে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.