স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন শিবরাত্রি। এমন বিরল সমাপতনের দিনে নিজের জীবন দিয়ে ছয়জন মানুষকে পুনর্জীবন দিলেন এক গৃহবধূ। কারও শরীরে প্রতিস্থাপিত হল তাঁর কিডনি, কারও দেহে হার্ট। বধূর কর্নিয়া ফিরিয়ে দিল কারও হারানো দৃষ্টিশক্তি। প্রতিস্থাপনের জন্য সংরক্ষিত থাকছে ত্বকও।
প্রাপ্তি রায়চৌধুরি। বাড়ি দমদমে। ব্রেন ও ব্রেনের আচ্ছাদনের মাঝে থাকা সাব আরকনয়েড অঞ্চলে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি ছিলেন দমদমেরই আইএলএস হাসপাতালে। শুক্রবার সেই ‘সাব আরকনয়েড হেমারেজ’-এর অভিঘাতেই ব্রেন ডেথ হয় ৫৪ বছরের এই উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পীর। অকালমৃত্যুর শোক চেপে রেখেই প্রাপ্তিদেবীর পরিবার অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেয়। যোগাযোগ করা হয় ‘স্টেট অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন’-এর সঙ্গে। এক এক করে খোঁজ মেলে গ্রহীতাদের।
জানা গিয়েছে, একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে আইএলএস হাসপাতালেরই এক রোগীর শরীরে। লিভার, দ্বিতীয় কিডনি ও ত্বক যাচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে। এসএসকেএমের সিরোসিস আক্রান্ত এক রোগীর শরীরে লিভার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। স্কিন ব্যাঙ্কে আপাতত সংরক্ষিত থাকবে ত্বক। যা প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে। প্রাপ্তিদেবীর হার্ট যাচ্ছে দক্ষিণ শহরতলির মুকুন্দপুরের আর এন টেগোর হাসপাতালে, কর্নিয়া দিশা হাসপাতালে।
প্রাপ্তিদেবীর ভাই চিকিৎসক, নেফ্রোলজিস্ট ডা. প্রতিম সেনগুপ্ত। কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বহু মানুষকে নবজীবন দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া প্রতিমবাবু নিজে দীর্ঘদিন ধরে অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। যখনই সুযোগ পেয়েছেন অঙ্গদানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচার করেছেন। অঙ্গদানের ব্যাপারে সবেচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেন তিনিই। দিদির অকালমৃতু্যর শোক সামলে অঙ্গদানের ব্যাপারে জামাইবাবু সব্যসাচী রায়চৌধুরির সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিমবাবু বলেন, ‘‘জামাইবাবু এককথায় রাজি হয়ে যান। সবার সহযোগিতায় দিদির প্রায় সব অঙ্গই প্রতিস্থাপিত হয়েছে। দ্রুত সব ব্যবস্থা হয়েছে। আশা করি সব প্রতিস্থাপন সফল হবে। ছ’জনের বেশি মানুষের দেহে বেঁচে থাকবেন দিদি। এটাই এখন সেনগুপ্ত ও রায়চৌধুরি পরিবারের সান্ত্বনা।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.