ফাইল ছবি।
অর্ণব দাস, বারাকপুর: পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, পুরসভায় চাকরি করেছেন অনেকদিন। কিন্তু কথায় আছে, লোভ এক বিপজ্জনক রিপু। সেই রিপুরই বশবর্তী হয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলেন শ্বেতা চক্রবর্তী (Sweta Chakraborty)। শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় সদ্য ধৃত অয়ন শীলের ‘ঘনিষ্ঠ বান্ধবী’ হিসেবে আপাতত ইডির স্ক্যানারে এই শ্বেতা। অয়নের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে শ্বেতার গাড়ির নথি, ব্যাংকের কাগজপত্র। আপাতত তাঁর খোঁজ নেই। তবে ইডি (ED) সূত্রে খবর, শ্বেতাকে জেরা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
দীর্ঘদিন মডেল (Model) জগতের সঙ্গে যুক্ত নৈহাটির বিজয়নগরের বাসিন্দা শ্বেতা চক্রবর্তী। ২০১৭ সালে অয়ন শীলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় অয়নেরই স্ত্রীর সুবাদে। অয়ন শীল প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা করেন। তারই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর ছিলেন শ্বেতা। দীর্ঘদিন ধরে কামারহাটি পৌরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করেছেন নৈহাটির (Naihati)এই তরুণী। সোমবার অয়ন শীলের বাড়ি থেকে যে সমস্ত নথি উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের আধিকারিকেরা, সেখানে পৌরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, দমদম, বরানগর, কামারহাটি, পানিহাটি ও হালিশহর পৌরসভায় অর্থের বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করা হয়েছিল বলে দাবি ইডির।
পানিহাটি পৌরসভার পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে কানাইলাল দে নামে একজন ৯৬ পাতার চাকরিপ্রার্থী তালিকার খসড়া পাঠিয়েছিল। এই ব্যক্তির খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, পানিহাটি ঘোলা পূর্বাঞ্চল এলাকায় কানুদা ওরফে কানাইলাল দে’র বাড়ি। এই ব্যক্তি পানিহাটি পৌরসভার কর বিভাগে কাজ করতেন। ২০২০ সালে অবসর নেন। তিনি জানান এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। তার নাম এই বিষয়ে কেন আসছে তিনি তা বলতে পারবেন না।
সেখানেই বেশ কয়েকটি পৌরসভার নাম ও ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে। আর তাতেই কামারহাটি পৌরসভায় (Kamarhati Municipality) কর্মরত শ্বেতা চক্রবর্তীর সূত্র পান তদন্তকারী অফিসারেরা। ইডির তদন্তে দেখা গিয়েছে, শ্বেতার গাড়ি কেনার সময় বেশ কিছু অর্থ দিয়েছিলেন অয়ন। শ্বেতার বাবা অরুণ চক্রবর্তী অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি জানান, কামারহাটি পৌরসভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত থাকলেও অবসর সময়ে অয়নের প্রোমোটিং ব্যবসায় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে কাজ করতেন শ্বেতা। সেই সুবাদেই গাড়ি কেনার জন্য কিছু অর্থ দিয়েছিলেন অয়ন। এর বেশি কিছুই নয়।
তবে কামারহাটি এলাকার মানুষজন জানাচ্ছেন অন্য কথা। নৈহাটির পাশাপাশি শ্বেতা ও অয়ন কামাহাটি পৌরসভার কাছে একটি আবাসনে মামা-ভাগ্নির পরিচয় দিয়ে থাকতেন। মাঝেমধ্যে তাঁরা আসতেন ও এই আবাসনে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁদের আর দেখা পাননি বলে জানিয়েছেন আবাসনের আবাসিক-সহ নিরাপত্তারক্ষী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানালে, একটি চারচাকা গাড়িতে তাঁরা যাতায়াত করতেন।
শ্বেতা চক্রবর্তীর বিষয়ে কামারহাটি পৌরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, ”২০১৬ সালে কামারহাটি পৌরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (Civil Engineer) পদে যোগদান করেন শ্বেতা চক্রবর্তী, অফিসের কাজ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কোনও কথাবার্তা হতো না। অয়ন শীল কাজের সূত্রে একবার কামারাহাটি পৌরসভায় এসেছিলেন,যদি আগে জানতাম এই ধরনের ঘটনা হবে তাহলে রিক্রুটমেন্টই করতাম না। এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সরকারি পদ্ধতি মেনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেওয়া হবে শ্বেতা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.