সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতায় ফিরল আমেরিকার মিনিয়াপোলিসের স্মৃতি। গত বছরের মে মাসে মিনিয়াপোলিসের রাজপথে গলায় হাঁটু মুড়ে বসে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে অত্যাচার করতে দেখা গিয়েছিল শ্বেতাঙ্গ পুলিশ আধিকারিক ডেরেক শভিনকে। শ্বাস নিতে পারছেন না বলে বারবার আর্তনাদ করছিলেন জর্জ ফ্লয়েড। তা সত্ত্বেও গলা থেকে হাঁটু সরাননি ডেরেক। শেষমেশ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ যায় জর্জ ফ্লয়েডের। গোটা বিশ্ব এহেন নৃশংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। প্রতিবাদ মিছিল বেরিয়েছিল।
নৃশংস অত্যাচারের ঘটনায় ফুঁসে ওঠেন প্রায় সকলেই। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ (Black Lives Matter) আন্দোলনের ঝড় ওঠে। মিনিয়াপোলিস থেকে কলকাতার এক্সাইড মোরের দূরত্ব কয়েক হাজার কিলোমিটার। ক্যালেন্ডারের পাতা বছরখানেক পেরোতে না পেরোতেই এক্সাইড মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ারের অমানবিক আচরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেল। যদিও এক্ষেত্রে প্রাণ হারাননি নির্যাতিত। এক্সাইড মোরের সেই নির্যাতিত কৃষ্ণাঙ্গও নন। কিন্তু রবিবার সন্ধেয় এক্সাইড মোরের ঘটনায় ফ্লয়েড জর্জের স্মৃতিই উসকে উঠল।
চোর সন্দেহে ধৃত যুবক এক্সাইড মোড়ের ফুটপাথে শুয়ে। রাস্তার থেকে কিছুটা উপরে সেই যুবকের মাথা। তার সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার তন্ময় বিশ্বাস। বুট পরা পা ওই যুবকের বুকের উপর। সিভিক ভলান্টিয়ারের এমন অমানবিক অত্যাচারের সাক্ষী আগে কখনও হয়নি কলকাতা। তাই নিমেষে কেউ কেউ স্মার্টফোনের ক্যামেরা অন করে গোটা ঘটনা তুলে নেন। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তা ভাইরাল হতেও বেশি সময় লাগেনি। এই ভাইরাল ভিডিওই নিমেষে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার স্মৃতি উসকে দিয়েছে।
ইতিমধ্যে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সকলেই। দুঃখপ্রকাশ করেছেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। মারধরের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার স্বয়ং। তাঁর সাফাই, এক্সাইড থেকে হাওড়াগামী বাসে এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে ওই যুবক। তাকে ধরে ফেলেন বাসের অন্যান্য যাত্রীরা। মারধর করতে শুরু করেন প্রত্যেকে। তাকে উদ্ধার করেছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার। সেই সময় পালানোর চেষ্টা করে ওই যুবক। গায়ের জোর বেশি হওয়ায় সেই যুবককে ধরে রাখতে পারছিলেন না। সে কারণেই বুকের উপর পা তুলে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে যা করেছেন তা ভুল হয়েছে বলেই দাবি ‘অনুতপ্ত’ সিভিক ভলান্টিয়ারের।
জানা গিয়েছে, তন্ময় বিশ্বাস ৩ বছর আগে সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজে যোগ দেন। তিনি নদিয়ার চাকদহের বাসিন্দা। যতক্ষণ না পরবর্তী নির্দেশ আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.