সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আরও বিপাকে ভারতী ঘোষ। এবার তাঁর ও তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হল। সূত্রের খবর, সিআইডির আবেদনে সাড়া দিয়ে ঘাটাল আদালত এই দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। কেশপুরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে জারি করা হয়েছে এই পরোয়ানা, খবর সূত্রের। সুজিত মণ্ডল আপাতত ফেরার। লোকচক্ষুর আড়ালে ভারতীও। তবে এবার তাঁর খোঁজে শহরে ও ভিনরাজ্যে তল্লাশি অভিযান আরও জোরদার করছে পুলিশ। সোনার বদলে টাকা দ্বিগুণ করার চক্রের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতেই পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষের ঘনিষ্ঠ দুই পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। শুভঙ্কর দে এবং চিত্ত পাল নামে ওই দুই অফিসারকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়ি থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়। আর এবার পুলিশের নজরে খোদ ভারতী ঘোষ।
সূত্রের খবর, বারবার নোটিস পাঠিয়েও সাড়া না মেলায় সিআইডির তরফে আদালতে ভারতীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। সেই মতো ঘাটাল আদালত ভারতী ও সুজিতের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারিতে সম্মতি দেয়। ইতিমধ্যেই ভারতী ঘোষ ও সুজিত মণ্ডলের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে দুজনেরই কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভারতী ঘোষের মোবাইল ফোন সুইচ অফ। তাঁর খোঁজে ফের মাদুরদহের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালাতে পারে পুলিশ, খবর সূত্রের। ইতিমধ্যেই ধৃত শুভঙ্করের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে নগদ ৪০ লক্ষ টাকা এবং চিত্ত পালের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা-সহ প্রচুর সোনাদানা। ধৃত দুই পুলিশ অফিসারকে আজই মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হবে। ভারতীর স্বামী মোটামারি আপান্না ভি রাজুকে এদিন ফের আনন্দপুর থানায় তলব করা হয়েছে। আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে ভারতী ঘনিষ্ঠ বিমল ঘোড়ুই এবং কেয়ারটেকার রাজমঙ্গল সিংকে। এবার এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হল ভারতী ঘনিষ্ঠ দুই পুলিশ অফিসার শুভঙ্কর দে ও চিত্ত পালকে। ভারতী ঘোষ যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন সেইসময় শুভঙ্কর দে ছিলেন ঘাটালের সার্কেল ইন্সপেক্টর। সেইসময় ঘাটাল থানার ওসি ছিলেন চিত্ত পাল। তাঁদের বিরুদ্ধে দাসপুর থানায় তোলাবাজির অভিযোগে এফআইআর করেছিলেন এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। শুক্রবার ভারতীর স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল নেতাজিনগর থানায়। এদিন থানায় চিঠি পাঠিয়ে তাঁর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য জানান, ভারতীর স্বামী এমএভি রাজু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভরতি।
সোনার বিনিময়ে টাকা দ্বিগুণ কাণ্ডের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের বিতর্কিত প্রাক্তন পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে। নতুন মামলা দায়ের হয়েছে মেদিনীপুর আদালতে। অভিযোগকারী বসিরহাটের গাড়ি ব্যবসায়ী ইউনুস আলি মণ্ডলের দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ২০১৬ সালে ভারতী ঘোষ তাঁর কাছ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। মেদিনীপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে ইউনুসের হয়ে মামলা দায়ের করেন তিন আইনজীবী তিলক মিত্র, সুমিত ভঞ্জ ও দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তী। অভিযোগে নাম রয়েছে ভারতীদেবীর তৎকালীন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী সুজিত মণ্ডল, খড়গপুর লোকাল থানার তৎকালীন ওসি রাজশেখর পাইন এবং ওই থানারই এসআই চিরঞ্জিৎ ঘোষেরও। কলকাতার মাদুরদহে এক ভারতী-ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিআইডি। মাদুরদহের যে ফ্ল্যাটে সিআইডি তল্লাশি চালিয়েছিল, ওই ফ্ল্যাটের মালিক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী আনন্দপুর থানায় গিয়ে ভারতীর স্বামী এম এ ভি রাজুর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। মেদিনীপুর আদালতে ইউনুসের আইনজীবীরা জানান, “গত ২০১৬-র ২৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটলেও আজ পর্যন্ত এক টাকাও উদ্ধার করতে পারেননি তাঁর মক্কেল। টাকা ফেরত পেতে তিনি হাই কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের বাইরে নানারকম ভয় দেখিয়ে জোর করে সেই মামলা তাঁর মক্কেলকে দিয়ে প্রত্যাহার করানো হয়। সেসময় টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তা ফেরত দেওয়া হয়নি।” ইউনুস জানিয়েছেন, “এর পরও একাধিকবার আমি বিভিন্ন পুলিশ কর্তার কাছে গিয়েছি। ভারতী ঘোষের বদলির পরও আমি খড়্গপুর লোকাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কোনও ফল পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.