স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: সর্ষের মধ্যেই ভূত! হোমের শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব যাঁর উপর, আন্তর্জাতিক শিশু পাচারে এবার জড়িয়ে গেল তাঁরই নাম৷ লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিদেশে শিশুপাচার কাণ্ডে এবার সিআইডির নজরে জলপাইগুড়ি জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সাস্মিতা ঘোষ৷ মঙ্গলবারই তাঁকে সিআইডি জেরা করতে চলেছে বলে খবর৷
হোম থেকে শিশুপাচার কাণ্ডে নজরদারি নিয়ে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় সোমবার রাতেই জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিককে শো-কজ করে কৈফিয়ত তলব করেছেন জেলাশাসক৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে উত্তর দিতে বলা হয়েছে৷ সাস্মিতা ঘোষের কাজকর্ম নিয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছেন সিআইডি আধিকারিকরা৷ অসঙ্গতির সূত্র ধরে তদন্ত চালাচ্ছেন তাঁরা৷
অভিযোগ, ধৃত চন্দনা চক্রবর্তীর হোম থেকে ১৯টি শিশুকে বিদেশে দত্তকের নামে পাচার করা হয়৷ এই দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে তদ্বির করেছিলেন স্বয়ং জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক৷ তাঁর স্বামী অন্য একটি জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের পদে রয়েছেন৷ তিনি ১২ লক্ষ টাকা দামের একটি গাড়ি চড়েন৷ ওই গাড়িটি চন্দনা চক্রবর্তীর কাছ থেকে পাওয়া, এমনটাও অভিযোগ উঠছে৷ যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে যে কোনও তদন্তের তিনি মুখোমুখি হতে রাজি বলে মঙ্গলবার সকালে জানিয়ে দিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সাস্মিতা ঘোষ৷ বলেছেন, “দত্তক প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া নিয়মের মধ্যেই পড়ে৷ এক্ষেত্রে যা করা হয়েছে আইন মেনেই হয়েছে৷” তাঁর দাবি, “আমাদের পারিবারিক পুরনো গাড়ি রয়েছে৷ সেটি ব্যবহার করি আমরা৷ এসব নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হচ্ছে৷”
রবিনসন স্ট্রিট কঙ্কালকাণ্ডের পার্থ দে’র অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার
বিদেশে শিশু দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে যে ‘চাপ’ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেছেন জলপাইগুড়ির ওই শিশু সুরক্ষা আধিকারিক৷ এমনকী চন্দনা চক্রবর্তীকে চিনলেও ঘটনায় নাম জড়ানো বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরিকে তিনি চেনেন না বলেও জানিয়েছেন৷
ধৃত চন্দনার হোম থেকে মোটা টাকার কমিশনে একের পর এক শিশু আমেরিকা, স্পেন, স্কটল্যান্ড, ফ্রান্সে পাচার হয়ে যাচ্ছে, অথচ জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক কিছু টের পাননি? উঠছে এই প্রশ্নও৷ একইসঙ্গে মাসে দু’বার করে যেখানে শিশু সুরক্ষা ইউনিটের পক্ষ থেকে হোমে পরিদর্শন চালানোর কথা, এক্ষেত্রে তা ঠিকমতো হত কি না সে ব্যাপারেও খোঁজ নিতে গিয়ে গাফিলতি খুঁজে পাচ্ছেন সিআইডি আধিকারিকরা৷ আর এখানেই খটকা লাগছে তাঁদের৷
যদিও এদিন সাস্মিতাদেবী বলেছেন, “বিষয়টি কোনও ব্যক্তির নয়৷ গোটাটাই সিস্টেমের মধ্যে৷ সেখানে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক হিসাবে আমার অবশ্যই দায়িত্ব আছে৷ ওই হোমে পরিদর্শনের সময় যেসব বিষয় নজরে এসেছে, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি৷” জেলাশাসক তাঁর কাছে যা জানতে চেয়েছেন, সময়ের মধ্যে অবশ্যই তার উত্তর দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷ ধৃত চন্দনা চক্রবর্তীর হোম থেকে দত্তকের নামে যে শিশুপাচারের রমরমা কারবার চলছে তা তিনি আঁচ করতে পারেননি বলে দাবি জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের৷
অমর একুশে শ্রদ্ধা এপার বাংলাতে, আবেগে ওপার
এদিকে, কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রী, আমলা ও ‘প্রভাবশালী’দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে দিতে চন্দনার কাছ থেকে জুহি চৌধুরি ডুয়ার্সে রিসর্ট আবদার করেছিলেন, এমনটাও অভিযোগ উঠছে৷ সত্যতা যাচাইয়ে তাঁর হদিশ পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সিআইডি৷ শিশুদের হোমের পর এবার সিআইডির নজরে চন্দনার ‘আশ্রয়’ হোম৷ সেখানে সাবালিকা আবাসিকরা থাকেন৷ তাঁদের ঠিকমতো খেতে না দেওয়া, মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে৷ ওই হোমেই হানা দিয়ে সোমবার প্রচুর জাল নথি উদ্ধার করেছে সিআইডি৷
এর পরই ওই হোমের আবাসিকদের অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ নথিপত্র যাতে সরাতে না পারে সেজন্য হোমে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ৷ ধৃত চন্দনা ময়নাগুড়ির একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা৷ তিনি গ্রেফতার হওয়ায় এবার চাকরি থেকে তাঁকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে জেলা শিক্ষা বিভাগ৷ জলপাইগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি ধরতিমোহন রায় বলেছেন, “পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট পেলেই ওই শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা হবে৷”
লাখ লাখ টাকা কমিশনে বিদেশে পাচার হয়েছে রাজ্যের শিশু
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.