অর্ণব আইচ: উড়তে উড়তে আটকে গেলেই বিপদ। তা গাছ হোক, কারও বাড়ির জানলা অথবা পুজো মণ্ডপ। চিনা ফানুস থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে পারে আগুন।
কালীপুজোর আগে চিনা ফানুস নিয়ে এমনই বিপদের আশঙ্কা করছে দমকল ও পুলিশ। চিনা ফানুস নিয়ে পদক্ষেপ করার জন্য কলকাতা পুলিশকে চিঠিও দিয়েছে দমকল। দমকলের এক কর্তা জানিয়েছেন, লালবাজারে তাঁরা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন, চিনা ফানুস ওড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না। চিনা ফানুস ওড়ার সময় কোথাও আটকে গেলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে যেতে পারে। তাই দমকল কর্তাদের মতে, সাধারণ মানুষ চিনা ফানুস না কিনলে বা না ওড়ালেই বিপদের আশঙ্কা কমবে।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, শব্দবাজি নিয়ে শহরবাসীকে সতর্ক করা হয়েছে। শব্দবাজি-সহ যে বাজিগুলি নিষিদ্ধ, তার তালিকাও পুলিশ তৈরি করেছে। কিন্তু ফানুস শব্দবাজি নয়। আবার আতসবাজির মধ্যেও চিনা ফানুসকে ফেলা যায় না। যদিও চিনা ফানুসের বিষয়ে পুলিশ সতর্ক হয়েছে। শহরের বাজি ব্যবসায়ীদের মতে, কালীপুজোর আগে কিছু ব্যবসায়ী চিনা ফানুস বিক্রি করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছোট দোকানদার বা কালীপুজো অথবা দীপাবলির আগে যাঁরা কলকাতায় অস্থায়ীভাবে দোকান দেন, তাঁরাই বিক্রি করেন বেশি সংখ্যক চিনা ফানুস। গড়ে কুড়ি টাকা করে একেকটি চিনা ফানুস অনেক বাজারেই ঢেলে বিক্রি হয়।
এই বিষয়ে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় জানান, তাঁরা চিনা বাজি ও চিনা ফানুস বিক্রির বিরোধিতা করছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে বাজি ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে, কেউ যেন বাজি বাজার বা বাজিমেলায় চিনা ফানুস বিক্রি না করেন। ফানুসের উপর নজর রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পুলিশকেও অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবু শহরের বহু জায়গায় বিক্রি হচ্ছে এই ফানুস। তবে দাম বেশি হলেও চিনা ফানুসের থেকে শুধু কাগজ দিয়ে তৈরি করা ভারতীয় ফানুস অনেক নিরাপদ বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের।
দমকল ও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গত বছরও কালীপুজোর সময় চিনা ফানুস থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। যদিও শহরের থেকে গ্রামের দিকে এই দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি। অভিযোগ উঠেছে, চিনা ফানুস তৈরির জন্য যে কাগজ ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যেই দাহ্য রাসায়নিক থাকে। এছাড়াও ফানুস ওড়ানোর জন্য নিচের দিকে থাকা যে বস্তুটি জ্বালানো হয়, তা খাঁটি মোম নয়। অভিযোগ, অ্যামোনিয়ার যৌগ ব্যবহার করে তৈরি করা হয় ওই বস্তুটি। চিনা ফানুস তুলনামূলকভাবে হালকা বলে মাটি থেকে হাজার ফুট পর্যন্ত উঠে হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে পারে।
দমকল আধিকারিকদের মতে, বরং তাতে বিপদ কম। অনেক সময়ই ফানুস কম উচ্চতায় উঠে গাছ, এমনকী বহুতলের জানালায়ও আটকে যেতে পারে। কালীপুজোর মণ্ডপের কোনও অংশেও আটকে যেতে পারে জ্বলন্ত চিনা ফানুস। তখন তা থেকেই ছড়িয়ে পড়তে পারে আগুন। ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড। তাই চিনা ফানুস থেকে যাতে বিপদ না ছড়ায়, সেই বিষয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও দমকল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.