ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: ‘ছেলেধরা’ গুজবে প্রথম ইন্ধন জোগাচ্ছে কারা? প্রত্যেকটি এলাকায় যারা গুজব ছড়িয়ে চিৎকার করে লোক জোগাড় করছে, এবার তাদেরই চিহ্নিত করতে শুরু করল পুলিশ। এখনও পর্যন্ত যে এলাকাগুলিতে গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, সেই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানাগুলির পক্ষে শুরু হয়েছে তদন্ত। ছেলেধরার গুজব নিয়ে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যও। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ছবি ও পোস্ট ভাইরাল হওয়ার ফলেই যে এই গুজব ছড়ায়, তা নিয়ে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত।
২০১২ সালের ডিসেম্বর ও ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে একইভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল ছেলেধরার গুজব। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার এন্টালি, নারকেলডাঙা, তপসিয়া, তিলজলা, কড়েয়া ও একবালপুরে ঘটেছিল একের পর এক গণধোলাইয়ের ঘটনা। তখন শহরে অন্তত ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে নারকেলডাঙায় এক যুবক ও তিলজলায় দুই মহিলার মৃত্যু হয়। বাকিদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। ৬ বছর পর ফের একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে চলেছে লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত বন্দর এলাকার রাজাবাগান থেকে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার কসবা, টালিগঞ্জ বা পূর্ব কলকাতার ট্যাংরা ও আনন্দপুরেও ঘটেছে একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা। আহত হয়েছেন অন্তত আটজন। তাঁদের মধ্যে কসবা আর টালিগঞ্জে আহত হয়েছেন দুই মহিলাও। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে টালিগঞ্জ ও আনন্দপুরের ঘটনাটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। টালিগঞ্জ থানায় রীতা সুরিয়া নামে এক মহিলা অভিযোগ জানান, তাঁর সাত বছরের মেয়েকে অপহরণ করার চেষ্টা করছিল এক ২২ বছরের যুবতী। যদিও কে বা কারা ওই যুবতীকে ছেলেধরা বলে চিহ্নিত করে এলাকার বাসিন্দাদের ডেকে সেখানে নিয়ে আসেন, তা এখনও পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। এদিকে ওই যুবতীকে গণধোলাই দেওয়ার পর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পর তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর নাম জেবা বানু। বাড়ি কড়েয়া এলাকার খালপট্টিতে। সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে তিনি থাকেন। কিন্তু কড়েয়া থেকে টালিগঞ্জের ওই রাস্তাটিতে কী করতে গিয়েছিলেন? কেনই বা তিনি ওই বালিকাটির কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। যদিও পুলিশের ধারণা, তিনি পুরোপুরি প্রকৃতিস্থ নন।
[মর্মান্তিক! নাগেরবাজারে বেপরোয়া বাসের চাকায় পিষ্ট পাঁচ বছরের শিশু]
আনন্দপুরের পশ্চিম চৌবাগা থেকে গণধোলাইয়ের শিকার যুবককে ঘিরেও উঠে এসেছে বহু প্রশ্ন। রবিবার রাতে ওই যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর নাম মুন্না। বাড়ি ট্যাংরা এলাকায়। যদিও নিজের আরও কয়েকটি নাম বলেছেন তিনি। আরও দুই যুবকের সঙ্গে এসে তিনি ঢুকে যাচ্ছিলেন কয়েকটি বাড়িতে। পালানোর সময় তাঁকেই ধরে ফেলা হয়। বাকি দু’জন পলাতক। তারা এলাকায় কোনও অপরাধ করতে এসেছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজাবাগান ও ট্যাংরা থেকে উদ্ধার হওয়া গণধোলাইয়ের শিকার দুই যুবক ভবঘুরে প্রকৃতির। আর কসবার মহিলা যে তাঁর ছেলেকে টিউশন থেকে নিতে এসেছিলেন, তা-ও প্রমাণিত। এ ছাড়াও কসবায় ছেলেধরা সন্দেহে দুই সাপুড়েকে গণধোলাই দেওয়া হয়। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই কে বা কারা ছেলেধরার গুজব ছড়ানো শুরু করেছে বা ইন্ধন জুগিয়েছে, তার সন্ধান মেলেনি। এর মধ্যে কোথাও মাইক নিয়ে, আবার কোথাও বা লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার করে এই ধরনের গুজব ছড়ানো বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। ছেলেধরার গুজব বন্ধ করতে সারা শহরজুড়ে টহলদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.