সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সকালে আমন্ত্রণ, বিকালেই হাজির অতিথি। সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বিকালে রাজভবনে চা-চক্রে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতিথির আসনে বসে রাজভবনে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানও দেখলেন। হাসিমুখে কথাবার্তা বললেন রাজ্যপাল এবং তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে। যা সাম্প্রতিককালে রাজ্য রাজনীতিতে একটি সুন্দর অধ্যায় হয়ে রইল। এতদিনকার চোরা সংঘাতে আপাতত ইতি পড়ল। একে অপরের সঙ্গে স্বাভাবিক সৌজন্য বিনিময়ের পথে হাঁটলেন রাজ্যের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রধান। তবে উভয়ের মধ্যে আলোচ্য বিষয় কী ছিল, তা গোপনই রইল।
দিনের শুরুতেই নাকি বোঝা যায় যে দিনটা কেমন যাবে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একথা কতটা প্রযোজ্য, জানা নেই। তবে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুরুতে যে আশা দেখা গিয়েছিল, দিনের শেষে সেই আশা পূরণ হয়ে গেল। সকালে রেড রোডে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এতদিনের চেনা আনুষ্ঠানিক সৌজন্য দূরে ঠেলেই দেখা গেল, দু’জনে বেশ হাসিমুখে একান্ত আলাপচারিতায় মগ্ন। মিনিট পাঁচেক উভয়ের মধ্যে কথাবার্তা হয়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিকেলে রাজভবনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী কথা দেন যাবেন বলে।
কথা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল চারটে নাগাদ পৌঁছে গেলেন রাজভবনে। তাঁকে স্বাগত জানান জগদীপ ধনকড়। রাজভবনের বাইরে লনে মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালকে পাশাপাশি বসতে দেখা যায়। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হয়। রবিবারের দিনটা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে একটি ব্যতিক্রমী দিন হয়ে রইল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞদের একাংশ। যদিও সৌজন্য বজায়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ পিছপা হন না। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরাজ্যে যখন এসেছিলেন, তখনও সৌজন্য বজায় রেখেই তাঁর সঙ্গে রাজভবনে দেখা করেছিলেন মমতা। মিলেনিয়াম পার্ক থেকে হাওড়া ব্রিজের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন একই মঞ্চে। এ নিয়ে বামপন্থী পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে তিনি বলেন, ‘প্রোটোকল’ মেনে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া।
তবে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব ছিল অন্যত্র। রাজ্যের প্রশাসনিক সমস্ত ব্যাপারে গোড়া থেকে রাজ্যপাল হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের তরফে। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রশাসনিক বৈঠক, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন থেকে গুরুত্বপূ্র্ণ বিলে সই করতে গড়িমসি, এসব নানা বিষয়ে রাজভবন-নবান্ন একে অন্যের উপর দায় চাপিয়েছে। ফলে উভয়ের সম্পর্কে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি কখনওই। যদিও রাজ্যপাল নিজে বারবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলোচনার টেবিলে ডেকেছেন। কফি হাউসে বসে আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছেন। এতদিন সেসব কিছুতেই সাড়া দেননি মমতা। এবার আমন্ত্রণ রক্ষা করে চলে গেলেন রাজভবনে। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ নিয়েও বিরোধী মহলে শুরু হয়েছে চাপা সমালোচনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.