ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ছাত্র পরিষদের (Chhatra Parishad) প্রতিষ্ঠা দিবস ঘিরে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার সাক্ষী রইল কলকাতা। রবিবার মহাজাতি সদনের অনুষ্ঠানে AICC নেতাদের সামনেই মঞ্চে হুমকি দিতে শোনা গেল যুব কংগ্রেস নেতাকে। বাম-তৃণমূলের (CPM-Congress)সঙ্গে জোট নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান যুব কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচী। জোটের দায় পালটা প্রদেশ নেতৃত্বের উপর চাপাল জাতীয় নেতৃত্ব। অনুষ্ঠানের মাঝপথে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ছাত্র ও যুব সংগঠনের কয়েকজন সদস্য। এমনই একাধিক বিক্ষিপ্ত ও অনভিপ্রেত ঘটনার সাক্ষী ছাত্র পরিষদের এবছরের প্রতিষ্ঠা দিবস। পরে অবশ্য কৌস্তভ জানান, সিপিএমের সঙ্গে জোটে তাঁর বিশেষ আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতা নয়।
প্রতি বছরের মতো এবছরও ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতার (Kolkata) মহাজাতি সদনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আমন্ত্রিত ছিলেন দিল্লির দুই নেতা শরৎ রাউত, যিনি এই মুহূর্তে প্রদেশ সংগঠনের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং ছাত্র সংগঠনের সদস্য রোশনলাল বিট্টু। সূত্রের খবর, শরৎ রাউতের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর (Adhir Ranjan Chowdhury) সম্পর্ক খানিকটা তিক্ত। যদিও এদিন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লিতে রয়েছেন তিনি, তাই এই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
এ তো গেল সংগঠনের নিজস্ব ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা। তবে অনুষ্ঠান মঞ্চে সবচেয়ে নজরকাড়া ঘটনা ঘটালেন অধীর ঘনিষ্ঠ যুব নেতা কৌস্তভ বাগচী। এআইসিসি নেতাদের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, “আমি সেই কৌস্তভ বাগচী যে চিদম্বরমকে আটকেছিলাম। আপনাদের বলে রাখি, তৃণমূলের সঙ্গে কোনওরকম আন্ডারস্ট্যান্ডিং হলে বিমানবন্দরে দিল্লির কোনও নেতাকে নামতে দেব না।” এরপরই তিনি নিজের দলবল নিয়ে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
কিছুক্ষণ মঞ্চে নীরবতা। তারপর AICC নেতা শরৎ রাউত বক্তব্য পেশ করতে উঠে কৌস্তভের উদ্দেশে বলেন, ”খুব গরম ভাষণ দিলেন উনি। তবে উনি যা বলছেন, এটা আমারও মনের কথা। আমিও চাই না সিপিএম বা তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হোক। জোটের দাবি নিচুস্তর থেকে আসে। প্রদেশের কিছু কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে জোট করতে চান। আমরা জোট চাই না। রাহুল গান্ধী চান না। আর সেই সুযোগে সিপিএম জোট করতে এসে আমাদের দাদা হতে চায়। এভাবে ২০১৯ সাল থেকে আমাদের ভোট কমে গিয়েছে।”
শরৎ রাউতের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তাঁর নিশানায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর উৎসাহেই জোট করে নির্বাচন লড়েছে কংগ্রেস। তাতে ভোটবাক্সে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে হাত শিবিরের। এমনকী অধীরকে দায়ী করে দিল্লিতে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন এই শরৎ রাউতই। এবারও তিনি স্পষ্ট বিরোধিতা জিইয়ে রাখলেন। ওয়াকিবহাল মহলের মত, AICC সদস্যদের সামনে ছাত্র পরিষদের অনুষ্ঠানে ইচ্ছে করেই বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই পরিকল্পনা ব্যুমেরাংও হয়ে গেল AICC সদস্য শরৎ রাউতের বক্তব্যে। এদিন অনুষ্ঠান শেষে ছাত্র পরিষদ জমায়েতের ডাক দেয়। সম্ভবত ডিসেম্বরে হবে সেই কর্মসূচি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.