Advertisement
Advertisement
ChantBangla

প্যারিস থেকে বেঙ্গালুরু, বাংলায় অঞ্জলিতে কলকাতার সঙ্গে মিলল বিশ্বের বাঙালি

বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার উদ্যোগ আপন করে নিল বিশ্বের বাঙালি। শামিল হল 'পুষ্পাঞ্জলি #ChantBangla'প্রয়াসে।

ChantBangla: Bengali community across the globe offer Durga Puja 2022 Asthami Pushpanjali in Bengali | Sangbad Pratidin
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:October 3, 2022 10:00 pm
  • Updated:October 23, 2022 10:11 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অর্থ বুঝে অষ্টমীর অঞ্জলি। অশুদ্ধ উচ্চারণ ছেড়ে মাতৃভাষায় আন্তরিক মন্ত্রোচ্চারণ। উদ্যোগ সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের। আপন করে নিল বিশ্বের বাঙালি। শামিল হল ‘পুষ্পাঞ্জলি #ChantBangla’প্রয়াসে।

অষ্টমীর সকাল। বাঙালির কাছে সবিশেষ। পবিত্র বস্ত্রে শুদ্ধ আচারে এই দিনেই তো জগজ্জননীর কাছে মনের আর্তি নিবেদন করেন বাঙালিরা। ২০২২-এ সেই অষ্টমীর সকাল ধরা দিল নিপাট বাঙালিয়ানার উদ্ভাসে। উত্তর থেকে দক্ষিণ – গোটা কলকাতা সমস্বরে উচ্চারণ করল পুষ্পাঞ্জলির বাংলা মন্ত্র। সংস্কৃত মন্ত্রের মাধুর্য নিশ্চিতই মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখার মতোই, যদি সে-মন্ত্র সঠিক উচ্চারিত হয়। দীর্ঘকালের অনভ্যাসে বাঙালি সেই চর্চা থেকে বর্তমানে বহুদূরে। এখন সংস্কৃত শব্দের অর্থ আর উচ্চারণ, দুই-ই বাঙালির কাছে প্রায় দুরূহ।

Advertisement

ফলত ভুল উচ্চারণে অর্থ না-বুঝে মন্ত্র আউড়ে যাওয়াই যেন ছিল দস্তুর। মুক্তির হাওয়া বয়ে আনল মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের উদ্যোগে এই কাজটি করেছেন শিক্ষাবিদ নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ী, ভাষাবিদ পবিত্র সরকার ও বিশিষ্ট পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। বাংলা ভাষায় অনুদিত এই মন্ত্রের বই পৌঁছে গিয়েছিল শহরের শতাধিক পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে হাতে। অষ্টমীর সকালে সেই বাংলা মন্ত্রেই পুষ্পাঞ্জলি তাই মণ্ডপে মণ্ডপে।

বাংলা ভাষা আর উৎসবের টানে এক হল গ্লোবাল বাঙালি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলায় অঞ্জলির লাইভ, ভিডিও করে বাঙালি জানান দিল এই উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা। ট্রেন্ডিং #ChantBangla বেঁধে রাখল আবিশ্ব বাঙালিকে।

[আরও পড়ুন: অষ্টমীতে বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে তৃপ্ত বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা, আনন্দিত যৌনপল্লির বাসিন্দারাও]

টালা থেকে কাশী বোস লেন, যোধপুর পার্ক থেকে বেলেঘাটা – সাড়া শহরের দিকে দিকে। বাংলা পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র ধ্বনিত হল বাঙালির পুজোপ্রাঙ্গনে। বাদ গেল না শহরতলীর পুজো মণ্ডপও। অর্থ বুঝে বাংলা মন্ত্রে অঞ্জলির আয়োজন ছোট-বড় বহু পুজোতেই। এই উদ্যোগের শরিক বিশিষ্ট থেকে সাধারণ মানুষ। এককথায় প্রত্যেক বাঙালি।

নিজের পাড়ার পুজো বড়িশা প্লেয়ার্স কর্নারে বাংলায় অঞ্জলি দিলেন বাঙালির আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অঞ্জলি শেষে হাসি মুখে জানিয়ে দিলেন সবার উপরে তিনি ‘বাঙালি তো!’ চিরকালের অভ্যাসের বেড়া ভেঙে বেরিয়ে এলেন প্রবীণরাও। নিউটাউনের ‘স্নেহদিয়া’ বৃদ্ধাশ্রমে বাংলায় অঞ্জলি দিয়ে আপ্লুত আবাসিকরা। বললেন, ‘কখনও যে বাংলায় অঞ্জলি দেব তা ভাবতে পারিনি’। জীবনে প্রথমবার বাংলায় অঞ্জলি দেওয়া তাই তাঁদের কাছে যেমন আনন্দের তেমনই গর্বের, মুক্তকণ্ঠে জানালেন সে-কথাই।

বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা যেমন তৃপ্ত, তেমনই প্রথমবার মানে বুঝে বাংলায় অঞ্জলি দিতে পেরে খুশি যৌনপল্লির বাসিন্দারাও। দুর্বার সমন্বয় কমিটির সভানেত্রী বিশাখা লস্করের কথায় ধরা পড়ল তা। বললেন, ‘সংস্কৃত ভাষাকে ছোট করছি না, কিন্তু সেটা বোঝা সবসময় সম্ভব হত না। এখন যখন বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার সময় আমি বললাম যে, আমি যদি জ্ঞানে-অজ্ঞানে কোনও পাপ করে থাকি, তখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, আমি কী বলছি, মায়ের কাছে ঠিক কী চাইছি।’ বাংলা মন্ত্রে অঞ্জলি আয়োজনের সার্থকতা ঠিক এখানেই। এই প্রয়াসকে তাই সাধুবাদ জানালেন ইন্দ্রজালের জাদুকর পি সি সরকার। বললেন, ‘এ তো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও যে এটা হতে পারল, তাতে আমি খুশি।’ জনপ্রিয় আরজে অগ্নি এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে বললেন, “ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি! বাংলা ভাষা’… সেই মাতৃভাষায় যদি মায়ের পুজো করা যায়, তার থেকে বড় উদ্যোগ আর কিছু হতে পারে না। মায়ের পুজোকে উপলক্ষ করে যদি মাতৃভাষারও বন্দনা করা হয়, তবে মন্দ কী! এই পুজো তো আসলে অকালবোধন, এই উদ্যোগে নাহয় বাংলা ভাষারও একটা অকালবোধন হল।” বাংলা ভাষায় অঞ্জলি আয়োজনের এই প্রয়াসে শরিক হল বিগ এফএম-ও। বিগ গ্রিন দুর্গায় পরিবেশবান্ধব পুজোর বার্তার সঙ্গে মিশে গেল বাংলায় অঞ্জলি দেওয়ার প্রয়াসও।

তবে শুধু কলকাতা নয়। বাংলা আর উৎসবের টানে মিলল দেশ ও বিদেশও। বেঙ্গালুরুর বাঙালিরা আয়োজন করলেন বাংলা ভাষায় পুষ্পাঞ্জলির। লন্ডন, টরেন্টো ও প্যারিসের প্রবাসী বাঙালিরাও সানন্দে পুষ্পাঞ্জলি দিলেন বাংলাতেই। মাতৃভাষায় মায়ের বন্দনামন্ত্র সাড়া ফেল আবিশ্ব বাঙালির মন ও মননে। আর তাই সকলেই একবাক্যে জানাচ্ছেন,পরের বছরও হোক বাংলায় অঞ্জলির আয়োজন। এই ধারা এগিয়ে যাক। বছর বছর মায়ের পুজো হোক মাতৃভাষাতেই। এবছর অষ্টমীর ভিতর মিশে থাকল বাঙালির অন্তরের এই আর্তিই।

[আরও পড়ুন: মহাষ্টমীর দুপুরে ছন্দপতন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ হল বর্ধমানের দুটি বড় মণ্ডপ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement