সুলয়া সিংহ: পুজো আসবে আসবে করে এসে ফিরেও গিয়েছে। দুর্গোৎসবের ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরেছে বাঙালি। সেই স্কুল-কলেজ, চাকরি ক্ষেত্রের একঘেয়ে রুটিন। কিন্তু বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাই সামনে ফের উৎসবের আমেজ। কালীপুজোর পরই জগদ্ধাত্রীর বন্দনায় মাতবে বাঙালি। আর জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটিই শহর। চন্দননগর। আলোর রোশনাই আর অভিনব শিল্পের সাক্ষী হতে ফের গা ভাসাবেন পুজোপ্রেমীরা। আর মজার বিষয় হল, প্রতিবারের মতো এবারও চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় থাকছে কলকাতার দুর্গোৎসবের ছোঁয়া।
দুর্গা পুজোয় ঘুরতে গিয়েছিলেন? তাই কলকাতার পুজো দেখা হয়নি। কিংবা উত্তরের পুজো পরিক্রমা করলেও দক্ষিণটা হয়ে ওঠেনি? অথচ বন্ধু-বান্ধবদের মুখে দক্ষিণের প্রশংসা শুনেছেন। তাই না দেখার আক্ষেপটা আরও বেড়েছে। তাহলে এবারের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আপনার গন্তব্য হোক চন্দননগর। কারণ দক্ষিণ কলকাতা বেশ কয়েকটি পুজো চলে যাচ্ছে হুগলি জেলায়। যার মধ্যে অন্যতম হিন্দুস্তান পার্ক। কালো অন্ধকারের প্রতীক। কিন্তু আঁধার আছে বলেই না আলোর এত মহিমা। আঁধারের মাঝে আলো, কালোর মাঝে সাদা, কুৎসিতের মাঝে সুন্দর খোঁজে রূপতাপস মানুষের মন। এই ধরাধামেই আঁধারেরও একটা স্বতন্ত্রতা আছে। কালো মানুষ রয়েছে, তাঁদের সংস্কৃতি রয়েছে। বর্ণের দোহাই দিয়ে তাঁদের হয়তো আলোর পথের দিশারি হতে বাধা দেওয়া যায়, কিন্তু তা চিরতরে নয়। তাঁদেরও উৎসব আছে, আঙ্গিক আছে। সেই আঙ্গিক ফুটে উঠেছিল হিন্দুস্তান পার্ক সর্বজনীনের পুজোমণ্ডপে। এই মণ্ডপই এবার চলে যাচ্ছে চন্দননগরের ভারতমাতা সংঘে। এছাড়া থিম শিল্পী অনির্বাণ দাসের আরও একটি পুজো এবার যাচ্ছে চন্দননগরের বাবুন পাড়ায়। দমদম তরুণ দলের মাঝি-মাল্লাদের জীবন আরও একবার জীবন্ত হয়ে উঠবে সেখানে। শহরের একগুচ্ছ পুরস্কার জিতে নিয়েছিল এই পুজো। চন্দননগরের নিয়োগীবাগানে দর্শনার্থীরা দেখতে পাবেন হরিদেবপুর ৪১ পল্লির মণ্ডপ। ক্রাউডপুলিং এই পুজো চন্দননগরেরও মন জয় করবে বলে আশা উদ্যোক্তাদের।
চন্দননগরের পাশাপাশি মানকুণ্ডুতেও থাকছে তিলোত্তমার ছোঁয়া। ত্রিধারা সম্মীলনী। প্রতিবারের মতো এবারও একাধিক পুরস্কারের অধিকারী এই মণ্ডপ দেখতে দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল। কংক্রিটের জঙ্গলে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতি। ভুল খাদ্যাভ্যাস। লাগামছাড়া জীবনযাপন। সবুজ ছেঁটে একের পর এক বহুতল গড়ে নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। আর এসবের প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে প্রকৃতি। মায়ের হাত ধরেই সবুজকে ফেরানোর প্রয়াস করেছিলেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা। সেই মণ্ডপই দেখা যাবে মানুকুণ্ডুতে। তবে কলকাতার বেশ কিছু পুজো কমিটিরই দাবি, চন্দননগরে মণ্ডপ দিয়ে আর্থিকভাবে বিশেষ লাভের মুখ দেখেন না তাঁরা। তবে ভিতরের গল্প যাই হোক দুর্গা পুজোর পরও বাঙালির উৎসবের আমেজ বজায় থাকবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.