Advertisement
Advertisement
বর্ণপরিচয়

বিলুপ্তির পথে বর্ণপরিচয়ের গর্ভগৃহ, হেরিটেজ ঘোষণার সিদ্ধান্ত কলকাতা পুরসভার

১৫০ বছরের পুরনো বর্ণপরিচয়ের ছাপাখানা।

Century old Barna Parichay printing press may down shutter
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 17, 2019 10:04 am
  • Updated:July 17, 2019 7:28 pm

কৃষ্ণকুমার দাস: বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর এবার বিলুপ্তির পথে তাঁর অমর  সৃষ্টি বর্ণপরিচয়ের গর্ভগৃহ। মুছে যেতে বসেছে নবকল্লোল-শুকতারার মতো কালজয়ী পত্রিকার আঁতুড়ঘর। ধূলিসাৎ হওয়ার মুখে ঈশ্বরচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত ছাপাখানা, ২১ ঝামাপুকুর লেনের দেড়শো বছরের প্রাচীন বাড়িটি। যে বাড়িতে শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর নন, দিনের পর দিন নিজেদের সৃষ্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রাজশেখর বসু, সুনীতি চট্টোপাধ্যায়, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়রা। বাঙালির ভাষাশিক্ষা তথা সাহিত্যর অন্যতম আতুঁড়ঘর মহানগরের বুক থেকে মুছে যাওয়ার উপক্রমের খবর আসতেই সক্রিয় হয়েছে কলকাতা পুরসভা। ঐতিহাসিক বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করে বর্ণপরিচয়-এর গর্ভগৃহ রক্ষার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

[আরও পড়ুন: বিপ্লবের পর এবার মাধবী, আরএসএস মদতপুষ্ট টলিউড সংগঠনের পাশে অভিনেত্রী]

হাওড়ার পাতিয়ালের জমিদার বরদাপ্রসাদ মজুমদার নেশার ঘোরে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলার পর কলকাতার ঝামাপুকুরে এসে ছাপড়াঘরে ১৮৬০ সালে ‘বিপিএম’ প্রেস নামে ছাপাখানা খোলেন। ১৮৯০ সালে এই প্রেসকে বর্ণপরিচয় ছাপার বরাত দেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৯১ সালে ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর পর বিপুল দেনার দায়ে বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়-সহ সমস্ত বই হাই কোর্টের রিসিভারের হাতে চলে যায়। কিছুদিন রিসিভার নিজেই বর্ণপরিচয় ছাপার পর নিলাম ডাকেন। বরদাবাবু দুই পুত্রকে হাই কোর্টে পাঠিয়ে বর্ণপরিচয়-সহ সমস্ত বইয়ের স্বত্ব কিনে নেন। কালক্রমে বিপিএম-এর বদলে দেব সাহিত্য কুটির নাম হয় ১৯২৪ সালে। সেই থেকে ২১ ঝামাপুকুর লেনের বাড়ি থেকে বর্ণপরিচয় প্রকাশ হয়ে আসছে।

Advertisement

বাঙালির দুই জনপ্রিয় পত্রিকা শুকতারা এবং নবকল্লোল এই বাড়ি থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে প্রায় সাত দশক ধরে। বাঁটুল দি গ্রেট বা হাঁদাভোঁদার কাহিনি গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় শুকতারার মধ্য দিয়ে বাঙালি মননে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু যে বাড়ি থেকে বর্ণপরিচয় বা শুকতারা প্রকাশ হচ্ছে সেটি বরদাপ্রসাদের নাতি নীরদ মজুমদারের উত্তরাধিকার হিসাবে সুরভী বসুর মালিকানা ছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িটি অন্য এক মালিকানায় হস্তান্তর হতেই ২১ ঝামাপুকুর লেনের ঠিকানায় বর্ণপরিচয়-সহ সমস্ত স্মৃতি মুছে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেব সাহিত্য কুটিরের অধিকর্তা তথা নবকল্লোল ও শুকতারার সম্পাদক রূপা মজুমদার জানান, “বাড়িটি যথোপযুক্ত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু সুরভীদেবী রাজি হননি। অন্য ব্যক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক এই বাড়িটি ভেঙে দিয়ে বহুতল করতে চাইছেন।” বাড়ির নতুন মালিকের কোনও বক্তব্য অবশ্য পাওয়া যায়নি।

১২৯ বছর আগে যে কড়িবরগার নিচে বর্ণপরিচয় ছাপা শুরু হয়েছিল সেই বাড়িটি আজও অক্ষত এবং মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। মঙ্গলবার পড়ন্ত বিকেলে পৌঁছে দেখি বাড়ির একতলায় দেব সাহিত্য কুটিরের দু’টি অফিস চলছে। সিইও রাজর্ষি মজুমদারের অফিসে তখন শতাব্দী প্রাচীন প্রকাশনা ‘এ টি দেব-এর ডিকশনারি’ ত্রিপুরায় পাঠাতে প্রবল ব্যস্ততা। প্রায় ১৪ ফুট উচ্চতার এক একটা তলে এখনও পুরনো দিনের কাঠের পাল্লা এবং ডিজাইন করা লোহার জাফরি। রন্ধ্রে রন্ধ্রে উঁকি দিচ্ছে বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে রাজশেখর বসু-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়দের কথামালা।

[আরও পড়ুন: বিপ্লবের পর এবার মাধবী, আরএসএস মদতপুষ্ট টলিউড সংগঠনের পাশে অভিনেত্রী]

ডিরেক্টর রূপা মজুমদারের আশঙ্কা, “যে কোনও দিন বাড়ির নতুন মালিক প্রোমোটিং করার জন্য ভাঙচুর শুরু করতে পারেন। তাহলে তো এক নিমিষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে বর্ণপরিচয়ের গর্ভগৃহ। হারিয়ে যাবে বাঁটুল দি গ্রেটের তাঁতুড়ঘর।” মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে দেখা করে ইতিমধ্যেই বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণার জন্য আবেদন করেছে প্রকাশনা সংস্থা। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এদিন জানিয়েছেন, “পুরসভার নিজস্ব হেরিটেজ কমিটি আছে। মেয়র বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান বাড়িটি বাঁচাতে হেরিটেজ ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন। শীঘ্রই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্ণপরিচয়ের ছাপাখানা সংরক্ষণ হবেই।”

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement