ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant labour) নিয়ে অব্যাহত থাকল কেন্দ্র-রাজ্য টুইট তরজা। পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে কে কতটা আছেন তা বোঝাতে রাজ্য–কেন্দ্রের রাজনৈতিক লড়াই চলছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। এই পরিস্থিতিতেই শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফের সরগরম হয়ে উঠল সম্মুখ সমরের লড়াই।
লকডাউনের পর্ব বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি। আর বাড়ি ফেরার পথে রাতের তারাদের মত কোথাও পরিযায়ী শ্রমিকরা ঢাকা পরছেন দিনের আলোয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের সমব্যাথী হওয়ার এই যুদ্ধে কখনও জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কখনও রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে ভিড়লেন দীনেশ ত্রিবেদী, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বা নুসরতরা। রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের দাবি, “যেখানে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে রোজ ১০৫টি ট্রেন প্রয়োজন, সেখানে রাজ্য সরকার সেই সংখ্যক ট্রেন দাবি করল এক মাসের জন্য।” পালটা সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের জবাব, “পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্ঘটনার ছবি আমরা দেখেছি। রেলমন্ত্রী হিসাবে একদিনে ওই শ্রমিকদের ট্রেনে করেই তাঁদের রাজ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তো এমন কোনও ব্যাপার ছিল না।”
বিদেশ থেকে দেশের ক’জনকে বিমানে ফেরানো হচ্ছে, তার তালিকাও প্রকাশ করে বিদেশমন্ত্রক। প্রায় সব রাজ্যের নাম থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চেয়েছেন সেখানে এমন কারও নাম উল্লেখ ছিল না। সেটি উদ্ধৃত করে টুইট করে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তথ্য লুকোনোর অভিযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রী টুইটে বলেন, “বিদেশমন্ত্রক কি এটা বিশ্বাস করতে বলছে যে জর্জিয়া থেকে গুজরাতের মানুষ ফিরতে চাইলেও কলকাতার মানুষ ফিরতে চান না? কিরঘিজস্থান থেকে বিহারের মানুষ ফিরতে চাইলেও বাংলার কাউকে ফিরিয়ে আনার নেই?” টুইটেই পালটা জবাব দেন মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রিবাস্তব। বলেন, “মন্ত্রক কোনও রাজ্যের মধ্যে বিভাজন করে না। দেশের ‘বন্দে ভারত মিশন’ সকল দেশবাসীর জন্য। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও আছেন।” জানানো হয়, ৩হাজার৭০০–রও বেশি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে তাঁর দাবি, “রাজ্যের সরকার তাদের ফিরিয়ে কোয়ারানটাইনে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করলেই সকলকে রাজ্যে ফেরানোর জন্য বিমানের ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী, আন্তর্জাতিক সীমানা দিয়েও যাতে বঙ্গবাসী এদেশে ফিরতে পারেন, তার ব্যবস্থাও করা হবে।” মন্ত্রক মনে করিয়ে দেয়, রাজ্যের দ্রুত প্রতিক্রিয়া চান তারা। তৎক্ষণাৎ ফের প্রতিক্রিয়া দেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, “বাংলার সরকার তার রাজ্যবাসীদের যে কোনও প্রান্ত থেকে ফিরে আসার জন্য দু’হাত বাড়িয়ে আহ্বান জানাচ্ছে।” পরিযায়ী শ্রমিকদের বিমানে ফিরিয়ে আনারও দাবি তোলেন তিনি। বলেন, “যেহেতু দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘ভোকাল ফর লোকাল’–এর কথা বলছেন, তা হলে কেন আমাদের দেশের গরিব পরিযায়ী ভাই–বোনেদের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটতে হবে? তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে কি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা যায় না?”
এরপরের পর্বে শুক্রবার রেলমন্ত্রীর টুইট। একদিনে ১০৫টি ট্রেনে সকলকে ফেরানোর প্রসঙ্গ তুলে বল বলেন, “আশা করব রাজ্যের সরকার বাংলার ভাই–বোনেদের ফেরাতে দু’হাত বাড়িয়ে দেবে।” তবে টুইটের পরেই সমালোচনার মুখে পড়েন রেলমন্ত্রী। সাংসদ নুসরত তাঁর কটাক্ষ করে বলেন, “টুইটারে এ নিয়ে প্রসঙ্গ তোলার বদলে লকডাউন যখন শুরু হল তখন দায়িত্ব নিয়ে দূরদর্শিতা দেখালে বুদ্ধিমানের মতো কাজ হত।” নুসরত বা কাকলির মতো রেলমন্ত্রীর সমালোচনা করতে ছাড়েননি দলের সিনিয়র নেতা দিনেশ ত্রিবেদীও। সওয়াল করেন, “মোদিজি যখন লকডাউনের ঘোষণা করলেন, তখন আপনার এসব পরামর্শ কোথায় ছিল? সময় মতো পদক্ষেপ করলে পরিযায়ী শ্রমিকদের এমন দুর্দিন দেখতে হত না।” তবে তৃণমূল সাংসদদের সাড়াশি চাপে আপাতত কেন্দ্র মুখে কুলুপ আটলেও টুইট যুদ্ধের জল যে বহুদূর গড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.