সন্দীপ চক্রবর্তী: ‘যশ’ (Cyclone Yaas) পরিস্থিতি পরিদর্শনে একই দিনে জেলা সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী। বিপর্য মোকাবিলায় একান্তে বৈঠকের কথা থাকলেও, একাধিক জটিলতা তা হতে পারেনি। শুধুমাত্র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন তরজা। কীভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদির (PM Narendra Modi) বৈঠক এড়িয়ে গেলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, এই প্রশ্ন তুলে একে একে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপি নেতারা। তারই জবাব দিতে শনিবার সাংবাদিক বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ”সত্যিটা সকলের জানা দরকার। আমার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্রদপ্তর একতরফাভাবে খবর প্রচার করা হচ্ছে। আমার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে এই কাজ।”
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ঘিরে ঠিক কী জটিলতা তৈরি হয়েছিল? সাংবাদিক বৈঠকে বসে শনিবার তার বিস্তারিত জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ”যশ বিধ্বস্ত এলাকায় আমার পরিদর্শনের সূচি ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী আচমকা নিজের সূচি ঘোষণা করেন। উনি অন্য রাজ্য সফরে গিয়েছিলেন। আমার রাজ্যে এসেছিলেন বিমান ধরার জন্য। কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের কথা বলা হয়। আমাদের অনেক জায়গা ঘোরার ছিল। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, সাগর, দিঘা। মাঝে কলাইকুন্ডা যাওয়া কঠিন ছিল। তবু উনি আসছেন, তাই দেখা করতে, আলোচনা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ”সাগরে গিয়ে শুনি, ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে ওঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য। রাস্তায় আমরা অপেক্ষা করছিলাম। আমি সফর কাটছাঁট করে দেখা করি। কিন্তু উনি কলাইকুন্ডায় আগেই পৌঁছে গেছিলেন। সেখানে গিয়ে এসপিজিকে ১০ মিনিট পর বলি, দেখা করতে দেওয়া হোক। ১ মিনিটের জন্য সময় চাই রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। এসপিজি জানান, ১ ঘণ্টা বাদে উনি কথা বলতে পারবেন। আমরা তারপরও অপেক্ষা করি। শুনলাম, কনফারেন্স রুমে বৈঠক করছিলেন। আমি ও আমার মুখ্যসচিব সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপির নেতা, বিরোধী দলনেতা রয়েছেন। তাও বলি, ঠিক আছে, পরে আমরা দেখা করব। বলি, আমাদের দিঘা যেতে হবে, আবহাওয়া ভাল না। আমরা এতগুলো জায়গায় ঘুরেছি, তারপর এখানে আসা কঠিন ছিল। এটুকু বলে আমি রিপোর্ট দিই। অনুমতি নিয়ে জানতে চাই, দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠক আছে, আমি কি যেতে পারি। অনুমতি নিয়েই গিয়েছি। তাহলে বলা হচ্ছে কেন যে বৈঠক আমি এড়িয়ে গিয়েছি?”
এরপর সুর আরও চড়িয়ে তিনি জানান, ”এটা পিএম-সিএম মিটিং ছিল না। যদি তাই হতো, তাহলে কেন সেখানে বিজেপির এত লোকজন ছিল? আমি ওখানে একা ছিলাম। কেন সামান্য সৌজন্য মেনে একটা চেয়ারও খালি ছিল না?” মুখ্যমন্ত্রীর আরও প্রশ্ন, ”দিল্লিতে কেন বিরোধীদের গুরুত্ব দেন না? গুজরাট গিয়ে কেন বিরোধী দলনেতাকে ডাকেননি, ওড়িশায় কেন ডাকেননি? আমার এখানে এসেই কেন ডাকলেন?” সবসময় এখানে এসে গন্ডগোল করার চেষ্টা করেন। বারবার বাংলায় এসেই বাংলার প্রশাসনের বদনামের চেষ্টা করা হয় বলে ফের অভিযোগে ফেটে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও ডাকা হয়েছে, শুক্রবার সকালে এই খবর জেনেই আপত্তি তুলেছিলেন মমতা। তখনই প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, ওই বৈঠকে তিনি থাকবেন না। আলাদা বৈঠকের জন্য় সময়ও চেয়েছিলেন। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া তাঁর পক্ষে কতটা অপমানজনক ছিল। তাঁর বক্তব্য এই ইস্য়ু নিয়ে আলোচনার পরিসর আরও বাড়িয়ে তুলল, তা বলাই বাহুল্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.