সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যে অব্যাহত, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ফের স্পষ্ট। এদিন নবান্নে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, কেন্দ্র কী চাইছে, তা স্পষ্ট নয়। তাদের মন্তব্যে স্বচ্ছতা নেই। তারা কী চাইছে তা পরিষ্কার হলে তবেই নিজেদের আগামী সিদ্ধান্তের কথা জানাব।
লকডাউনের মধ্যে শনিবারই আরও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। গ্রিন জোনের দোকানপাট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শপিং মল ও সুপারমার্কেট বন্ধ রাখতে হবে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে স্পা, সেলুন, মদের দোকান খোলারও অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে পাড়ার ছোটখাটো দোকান, স্ট্যান্ড অ্যালোন স্টোর শর্তসাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে বলেই জানিয়ে দেয় কেন্দ্র। মেনে চলতে হবে করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের জারি নির্দেশিকাও। অর্থাৎ মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা- ইত্যাদি নিয়ম আগের মতোই বহাল রাখতে হবে। এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র এক-এক সময় এক-একরকম কথা বলছে। তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষক দল এসে বলছে লকডাউন মানতে হবে। বাইরে বেরনো যাবে না। আবার কেন্দ্র সব দোকান খুলে দিতে বলছে। দোকান খুললে তো মানুষ রাস্তায় বেরবেই। আমি তাহলে তখন কীভাবে বলব যে বেরবেন না। ওরা যা নির্দেশ দিচ্ছে আর যা বলছে, দুটোর মধ্যে পার্থক্য থাকছে। ব্যাপারটা স্পষ্ট হচ্ছে না। লকডাউন আর সব খুলে দেওয়া দুটো একসঙ্গে চলতে পারে না। আমাদের কাছে বিষয়টা আগে পরিষ্কার হবে, তারপর বুধবার সিদ্ধান্তের কথা জানাব। রাজনীতি বাদ দিয়ে স্বচ্ছ নির্দেশিকা দিলে অবশ্যই তা মানব।” এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। তবে কিছু বলার সুযোগ পাননি বলেও জানান মমতা।
রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য গত কয়েকদিন ধরে বাংলার বিভিন্ন জেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। যা নিয়ে রাজ্য সরকারের যে অসন্তোষ রয়েছে, তা স্পষ্ট। কারণ এদিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হুটহাট করে নির্দেশিকা দিয়ে দিচ্ছে। তাতে আপত্তি নেই আমাদের। তবে আলোচনা করা উচিত ছিল।” একই সঙ্গে করোনা সংক্রান্ত কাজের জন্য কোভিড ম্যানেজমেন্ট ক্যাবিনেট কমিটিও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে এদিন রাজ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫০৪। মৃত সংখ্যা ২০-ই রয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৯ জন। সেই সঙ্গে লকডাউনে যে বাংলা করোনা মোকাবিলায় অনেকটাই সফল, সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। জানান, ২৫ মার্চ যেখানে অ্যাকটিভ কেস ছিল ৯টা, সেখানে ২৬ এপ্রিল ৫০৪টা। অর্থাৎ পজিটিভ কনফার্মেশন রেট ৫.৪%। গোটা দেশে যে রেট ৫.২৫%। সুস্থ হয়ে ওঠার হারও অন্য রাজ্যের তুলনায় ভাল। ১৮ শতাংশ মানুষ ভাল হয়ে উঠেছে। মৃতের হার দেশে যেখানে ৩.০১ সেখানে বাংলায় ২.০৬। বর্তমানে মোট আটটি জেলায নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। আগে যেখানে চারদিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ হচ্ছিল, এখন তা ন’দিনে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া বাড়ানো হয়েছে টেস্টিং ল্যাব, আইসোলেশন বেডও। বর্তমানে রাজ্যে আইসোলেশন বেড ৭৯৬৯টি। টেস্টিং ল্যাব রয়েছে ১৪টা। আরও ১০টা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এখনও পর্যন্ত ১২,০৪৩টি টেস্ট হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, ৩.৪ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সমীক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাকে করোনা মুক্ত করতে যা যা প্রয়োজন, সব ব্যবস্থাই নিয়েছে প্রশাসন বলে জানান মুখ্যসচিব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.