বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: রাজ্যের গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (Garden Reach Shipbuilders & Engineers Ltd) মাথায় এবার বিলগ্নীকরণের খাঁড়া। দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের অগ্রণী তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জিআরএসই), বিইএমএল লিমিটেড এবং মিশ্র ধাতু নিগম লিমিটেডে নিজেদের অংশীদারিত্ব কমিয়ে আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনটাই সোমবার রাজ্যসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপাদ নায়েক জানিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের এক প্রশ্নের উত্তরে নায়েক লিখিতভাবে জানিয়েছেন, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে কেন্দ্র সরকারের অংশীদারিত্ব কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থাগুলি হল, বিইএমএল লিমিটেড, গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং মিশ্র ধাতু লিমিটেড। তবে এই প্রক্রিয়া বাজারের অবস্থার হিসেবেই সম্পন্ন হবে। তাই কত দিনের মধ্যে এই কাজ হবে তা এখনই বলা সম্ভবপর নয়।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে যে, রাজ্যের গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সে বিলগ্নীকরণের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, এই সমস্ত ক্ষেত্রেই সংস্থার স্বল্প অংশেরই বিলগ্নীকরণ করা হবে। সংস্থার পরিচালনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন করা হবে না বলেই আশ্বস্ত করেছেন নায়েক। উল্লেখ্য, নায়েক এদিন যে তিনটি সংস্থার নাম উল্লেখ করেছেন সেই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাই লাভজনক এবং সরকারি খাতায় ‘মিনি রত্ন’ হিসেবেই তাদের পরিচিতি রয়েছে।
কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেসরকারিকরণে জোর দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন সরকার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ দিলেও সরাসরি ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়। ফলে চারটি স্ট্র্যাটেজিক ক্ষেত্রের হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা ছাড়া বাকি সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণে কেন্দ্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বেসরকারিকরণের স্বপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, “সরকার নিজে যখন কোনও ব্যবসায় নামে তখন তা লোকসানের মুখ দেখে। কারণ সরকার নিয়মের জালে বাঁধা। তাছাড়া বাণিজ্যিক দিক থেকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার মতো হিম্মতও সরকারের মধ্যে দেখা যায় না।” তার আগে অবশ্য কেন্দ্রীয় বাজেটেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বিলগ্নীকরণের পক্ষে সওয়াল করে তার মাধ্যমে পাঁচ বছরে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রের এই বিলগ্নীকরণ নীতির প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার যে অনড়, এদিন সেই বিষয়টিই আরও স্পষ্ট হয়েছে।
এর আগে লোকসানে চলার যুক্তিতেই কেন্দ্রের তরফে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় বিলগ্নীকরণের দরজা খোলা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে লাভজনক, এমনকি ‘রত্ন’ তালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির ক্ষেত্রেও যে কেন্দ্র বিলগ্নীকরণের দরজা হাট করে দিতে চাইছে, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যা কম করার জন্য ইতিমধ্যেই নীতি আয়োগকে তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নীতি আয়োগের সুপারিশের ভিত্তিতে চূড়ান্ত তালিকায় অনুমোদন দেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.