অর্ণব আইচ: পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা নর্থ রোডে সার দেওয়া গার্ডরেলের সামনে বসে দুই পুলিশকর্মী। এক যুবক ওই রাস্তা ধরে যাবেন বলে গার্ডরেলে হাত দিতেই রে রে করে উঠলেন তাঁরা। একই দৃশ্য দক্ষিণ কলকাতার পদ্মপুকুর রোড, গড়িয়ার নয়াবাদ অথবা মধ্য কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে। সিল কিছুতেই ভাঙা যাবে না। আর এই কাজটি যাতে কেউ না করতে পারে, তার জন্য এবার কলকাতার বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে নতুন করে বসছে সিসিটিভি ক্যামেরা। মূলত শহরের হটস্পটগুলিতেই পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেই হিসেবে দেখতে গেলে শুধু করোনার থাবা থেকে শহরকে বাঁচাতে নতুন করে আরও অন্তত হাজার খানেক সিসিটিভি বসাচ্ছে পুলিশ। সারা শহরজুড়ে যে এলাকাগুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে, তার উপর দিনরাত কড়া নজর রয়েছে পুলিশকর্তাদের। সেখানে যখন তখন চলছে পুলিশের টহল। আকাশপথে নজর রাখছে ড্রোনও। তার উপর এবার শুরু হল সিসিটিভির নজরদারি।
পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার যে যে এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, সেই এলাকাগুলি মূলত সিল করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের শ্যামপুকুর, বেলগাছিয়া বস্তি থেকে শুরু করে মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকো, পোস্তা, মুচিপাড়া বা দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর, টালিগঞ্জ। একদিকে পূর্ব কলকাতার তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর, নারকেলডাঙা আবার অন্যদিকে, পঞ্চসায়রের বিস্তীর্ণ এলাকা বা বন্দর এলাকার গার্ডেনরিচ-সহ শহরের বহু জায়গা এখন পুরোপুরি বন্ধ। ওই অঞ্চলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বাইরের গাড়ি। এমনকী, বাসিন্দাদের যাতায়াতও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের খাবার দাবার বা ওষুধের সমস্যা যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কিছু অঞ্চলে বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বার। যার যা প্রয়োজন রয়েছে, সেই নম্বরে মেসেজ করে জানালে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। শুধু পুলিশের একটাই অনুরোধ, লকডাউন যেন কেউ না ভাঙেন।লালবাজার এক কর্তা জানিয়েছেন, সারা শহরে লকডাউন লঙ্ঘন রুখতে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশেষ নজরদারি রয়েছে সিল করে দেওয়া হটস্পটের উপর। নারকেলডাঙা মেন রোড, তপসিয়া, মুক্তরাম বাবু স্ট্রিট, মদন মোহন বর্মন স্ট্রিটের মতো মূল রাস্তাগুলির সঙ্গে সঙ্গে তার আশপাশের অপরিসর বহু রাস্তাও সিল করে দেওয়া হয়েছে। দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট থানার গাড়ি ওই অঞ্চলে চালাচ্ছে টহল। এলাকায় ঘুরে নজর রাখছেন পুলিশকর্তারাও। এ ছাড়াও পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে হটস্পটগুলিতে। কিন্তু লকডাউন ভেঙে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যখন তখন ঘোরাঘুরি অথবা কেউ সিল ভেঙে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কি না, সেদিকে সারাদিন ও রাতে অতিরিক্ত নজরদারি করার জন্যই বসানো শুরু হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। লালবাজারের কর্তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ডিভিশনের ডিসিকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন থানার ওসিদের সঙ্গে আলোচনা করে যেখানে যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন, তা বসিয়ে নেন। লালবাজার কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার দাম ও তা লাগানোর খরচ মিটিয়ে দেবে। মূলত যে জায়গা থেকে সিল শুরু হয়েছে, সেখানে ক্যামেরা লাগানো থাকছে, যাতে অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়। আবার প্রত্যেকটি অপরিসর রাস্তা বা গলির মুখেও থাকছে ক্যামেরা। এ ছাড়াও আগে যে ক্যামেরাগুলি লাগানো ছিল, সেগুলির মাধ্যমেও চলছে নজরদারি।
এক পুলিশকর্তার কথায়, এই বিষয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে মধ্য কলকাতা। মধ্য কলকাতার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, করোনা নিয়ে জোড়াসাঁকোর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল আতঙ্ক। ইতিমধ্যেই ওই এলাকার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, মদন মোহন বর্মন স্ট্রিট, তারা চাঁদ দত্ত স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট, মেছুয়া বাজার বা ফলপট্টি, বালক দত্ত লেন-সহ বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বড়বাজার ও পোস্তা অঞ্চলে ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর পর তা বউবাজার মুচিপাড়া অঞ্চলেও বসানো হবে। লালবাজার জানিয়েছে, প্রত্যেক ডিসি পদমর্যাদার অফিসার এই বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। দক্ষিণ কলকাতা, পূর্ব কলকাতা, দক্ষিণ পূর্ব কলকাতা, বন্দর, পূর্ব কলকাতা ও শহরতলি অঞ্চলের হটস্পটগুলিতে এবার লাগানো শুরু হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। থানায় বসে সিসিটিভি ফুটেজের উপর আধিকারিকরা নজর দিতে পারবেন। প্রয়োজনে মোবাইলেও যাতে নজরদারি করা যায়, সেই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সিসিটিভির মাধ্যমে আইন ভঙ্গকারীদের সনাক্ত করা হবে। সেইমতো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লকডাউন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এই সিসিটিভির মাধ্যমে এলাকার উপর নজরদারি করা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.