সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেট্রো চ্যানেলে ১৩ বছর আগেকার স্মৃতি ফিরে এসেছে। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জেরে রবিবার সন্ধে থেকে অনির্দিষ্টকালীন ধরনায় বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সকালের মেট্রো চ্যানেলেও ধরা পড়ল একই ছবি। ধরনা মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দেখা গেল মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মহুয়া মৈত্রদের। সকাল হতে না হতেই মেট্রো চ্যানেলে দলের সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। রাজ্যের এমন নজিরবিহীন সাংবিধানিক সংকট কাটাতে আজ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে দু’পক্ষই। সমস্ত নথিপত্র নিয়ে তৈরি হচ্ছে সিবিআই। নিজাম প্যালেসে রাতভর দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্য প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের হয়ে শীর্ষ আদালতের আইনি লড়াইয়ে নামতে পারেন রাজ্যসভার সাংসদ, দুঁদে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলন, মেট্রো চ্যানেলে ধরনায় বসছেন মুখ্যমন্ত্রী
রবিবার বিকেলে সিবিআই আধিকারিকরা কলকাতা পুলিশ কমিশনারের বাড়ি গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মতো পদক্ষেপ নিতেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত। কমিশনার রাজীব কুমারের লাউডন স্ট্রিটের বাংলোর বাইরে কর্তব্যরত কলকাতা পুলিশের তরফে সিবিআই আধিকারিকদের বাধা দেওয়া হয়। রীতিমতো ঠেলেঠুলে তাঁদের পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শেক্সপিয়র সরণি থানায়। অন্যদিকে, শহরে সিবিআইয়ের সদর দপ্তর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও করে কলকাতা পুলিশ। পুলিশ আধিকারিকরা যান নিজাম প্যালেসে, আটকে রাখা হয় সিবিআই আধিকারিকদের। পরিস্থিতিত নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাঁরাই নিজাম প্যালেসে আটকে থাকা আধিকারিকদের মুক্ত করেন।
রাজীব কুমারের বাংলোর সামনে সিবিআই আধিকারিকরা, ঢুকতে বাধা দিল পুলিশ
যথাযথ নথি ছাড়া পুলিশ কমিশনারের বাড়ি গিয়ে তল্লাশির চালানোর চেষ্টা, রাজ্য প্রশাসনের কাজে অযথা হস্তক্ষেপ করার মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজ্যের তরফে। এটা সাংবিধানিক সংকট বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘সংবিধান বাঁচাতে আমি ধরনায় বসছি মেট্রো চ্যানেলে।’ গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সঙ্গে একে তুলনা করে তাঁর আহ্বান, সেভ ইন্ডিয়া মুভমেন্ট বা দেশ বাঁচাও আন্দোলনে শামিল হন। ঘটনার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই একে একে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে টুইট করতে থাকে বিজেপি বিরোধী প্রায় সব কটি দল। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, শরদ যাদব, রাহুল গান্ধীরা সিবিআইয়ের পদক্ষেপের নিন্দায় সরব হন। সকলকে পালটা ধন্যবাদ জানানো হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। নিরাপত্তার জন্য এদিন সকাল থেকে সিবিআইয়ের সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স এবং নিজাম প্যালেসের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
All of us together Thank u @H_D_Devegowda@RahulGandhi Behen MayawatiJi@mkstalin@yadavakhilesh@ncbn @ArvindKejriwal@Pawarspeaks@laluprasadrjd@OmarAbdullah@MehboobaMufti
@YaswantSinha@yadavtejashwi@HemantSorenJMM@HardikPatel_@DrAMSinghvi@SharadYadavMP@jigneshmevani80 pic.twitter.com/14mKjPqZEH
— Derek O’Brien | ডেরেক ও’ব্রায়েন (@derekobrienmp) February 4, 2019
এদিকে, আজ রাজ্য বাজেট অধিবেশন। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ধরনা মঞ্চের পাশে একটি অস্থায়ী জায়গায় মন্ত্রিসভার বৈঠক হতে চলেছে। সেখান থেকেই বিধানসভায় যাবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কৃষকদের এক সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যেমে ভাষণ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, সংঘাত জিইয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পাশাপাশি সংসদেও কেন্দ্র বিরোধী সুর চড়াতে চায় তৃণমূল। সুপ্রিমোর নির্দেশে সেই মতো প্রস্তুতি চলছে তৃণমূল শিবিরে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই নজিরবিহীন ঘটনার রেশ কোনদিকে গড়ায়, তা বুঝতে আজ সকলের নজর দিল্লির শীর্ষ আদালতে।
ছবি: আশুতোষ পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.