অর্ণব আইচ: কখনও বদলি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের স্বমহিমায় একই জায়গায় ফিরে আসা। আবার কখনও বা ভেন্ডরদের কাছ থেকে দুদফায় কাটমানি খাওয়া। আর জি কর হাসপাতালের দুর্নীতি মামলায় একের পর এক অভিযোগ উঠে এসেছে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। সিবিআইয়ের দাবি, এই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির পিছনে থাকা সন্দীপ ঘোষকে মদত জুগিয়েছেন কয়েকজন ‘প্রভাবশালী’। কাদের মদতে সন্দীপ ঘোষ ও তাঁর সঙ্গীদের এত বাড়বাড়ন্ত, সেই ব্যাপারে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।
ইতিমধ্যেই সন্দীপ ঘোষ ছাড়াও মা তারা ট্রেডার্সের মালিক ঠিকাদার বিপ্লব সিংহ, ভেন্ডার সুমন হাজরা, সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষী আফসার আলিকে গ্রেপ্তার করে জেরা করছেন সিবিআই আধিকারিকরা। নিরাপত্তারক্ষী হয়েও আফসার আলি নিজেও কীভাবে ভেন্ডারের কাজ করত, তা জানার চেষ্টা করছে সিবিআই। সিবিআইয়ের জেরার মুখে এই তিন ধৃত ব্যক্তিরই দাবি, ‘সন্দীপ স্যার’ তাঁদের যে রকমের নির্দেশ দিতেন, সেই নির্দেশই তাঁরা পালন করতেন।
তদন্ত চলাকালীনই সিবিআইয়ের হাতে এসেছে সাতটি ভুয়ো সংস্থার হদিশ। সেগুলির নথিও সিবিআই উদ্ধার করেছে। ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে টেন্ডার তোলা হত। সিবিআইয়ের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, ভেন্ডার তথা ঠিকাদার বিপ্লব সিংহের সংস্থাকেই সন্দীপ ঘোষ সুভ্যেনিয়র ছাপা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সাউন্ড সিস্টেম ও মাইক ভাড়া নেওয়ার বরাত দিতেন। এ ছাড়াও এই সংস্থাটিকেই বরাত দেওয়া হত ওয়াটার কুলিং মেশিন, ওয়াটার পিউরিফায়ার, পর্দা, মেডেল, শংসাপত্র, উত্তরীয়, কোনও অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য যাবতীয় খাবার ও উপহারের প্যাকেট, পেস্ট, টি ব্যাগ, তোয়ালে, ফুলের সজ্জা-সহ আরও বিভিন্ন জিনিসের। এই তথ্য হাতে পাওয়ার পর সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে প্রশ্ন করে যে, বিপ্লব সিংহের এই বিশেষ সংস্থাটিকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী? এই ব্যাপারে সন্দীপ ঘোষের বয়ান অসঙ্গতিমূলক মনে হয়েছে সিবিআইয়ের। কীভাবে বিপ্লব সিংহ ও সুমন হাজরার মতো ভেন্ডারের সঙ্গে সন্দীপ ঘোষের মতো চিকিৎসকের যোগাযোগ এবং এত ঘনিষ্ঠতা হল, সেই ব্যাপারে তথ্য জানতেও সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে অন্য অভিযুক্ত তথা ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হচ্ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়ার একটি বেসরকারি সংস্থা আর জি কর হাসপাতালেই অভিযোগ জানিয়ে বলে যে, সন্দীপ ঘোষ প্রত্যেক ভেন্ডার ও ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছেন আর জি করের প্রত্যেকটি টেন্ডারের পিছনে ভেন্ডারদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ করে কাটমানি দিতে। এর অর্ধেক অর্থাৎ ১০ শতাংশ টাকা দিতে হত অর্ডার পাওয়ার আগেই। সিবিআইয়ের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, আর জি কর থেকে বদলি হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজের জায়গায় ফিরে এসেছিলেন সন্দীপ ঘোষ। এর পর গত বছরের নভেম্বরে তিনি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে বদলি হন। কিন্তু ফের তিনি আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ হয়ে ফিরে আসেন। সিবিআইয়ের দাবি, প্রভাবশালীদের মদত ছাড়া সন্দীপ ঘোষের এত ‘কুকীর্তি’ সম্ভব নয়। সন্দীপ ও তার সঙ্গীদের জেরা করে এই প্রভাবশালীদের পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.