অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায়ও সেই ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ দেখছে সিবিআই। তাই এই খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে আর জি করের দুর্নীতির সংযোগ খুঁজছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সারদা থেকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি-সহ একাধিক মামলায় সিবিআই সামনে নিয়ে এসেছে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’কে। কোনও ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারি ও তাঁকে হেফাজতে রাখার জন্য কারণ হিসাবে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’-এর অংশ বলে আদালতে দাবি তোলেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা। এবার আর জি কর কাণ্ডের তদন্ত শুরু করার পরও ‘বৃহত্তর যড়যন্ত্র’-এর তত্ত্বকেই সামনে নিয়ে আসা হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআইয়ের সূত্র।
তদন্তে সিবিআইয়ের প্রশ্ন, কোনও দুর্নীতির তথ্য জানতে পেরেছিলেন আরজিকরের নির্যাতিতা? করে উঠেছিলেন প্রতিবাদ? আর সেই জন্যই কি তাঁকে খুন করা হয়? এবার এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে আরজিকর হাসপাতালে দুর্নীতির সঙ্গে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার কোনও সংযোগ রয়েছে কি না, সেই ব্যাপারেও তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।
একদিকে, আরজিকর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের তদন্ত, অন্যদিকে, আরজিকরেই দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত একসঙ্গে করছে সিবিআই।
যদিও সিবিআইয়ের দুটি আলাদা শাখা এর তদন্ত শুরু করেছে। তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, আরজিকরে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত শুরুর পরই সিবিআইয়ের হাতে আসতে শুরু করে দুর্নীতির তথ্য। মূল অভিযোগের আঙুল ওঠে আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে প্রাক্তন সুপারকে সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করে জেরা করা হয়। প্রাক্তন অধ্যক্ষকে টানা নদিন ধরে তলব করেও জেরা করে সিবিআই। নির্যাতিতার মা ও বাবার অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁদের মেয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন। বিভিন্ন মহল থেকে তাঁদের মেয়েকে হুমকি দেওয়া হত।
আবার এমন তথ্যও তদন্ত চলাকালীন সিবিআই পায় যে, কিছু ব্যক্তি ওই নির্যাতিতার গাড়ি ভাঙচুর করে। এই গাড়ি ভাঙচুরের ব্যাপারে তথ্য পেতে নির্যাতিতার গাড়ির চালককেও সিবিআই জেরা করে। এর মধ্যেই কোভিডকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে আর জি কর হাসপাতালের তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরূপ করা হয়েছে, এমনই অভিযোগ আসতে শুরু করে সিবিআইয়ের কাছে। আরজিকরের কয়েকজন চিকিৎসকের কাছ থেকে সিবিআই এমনও খবর পায় যে, অর্থ তছরূপ ও টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির বিষয়গুলি জানতে পারেন নির্যাতিতা। তিনি যে বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন, সেই বিভাগেও বেশ কয়েক লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। নির্যাতিতা এর প্রতিবাদ করেছিলেন।
সেই কারণে তাঁর কাছে একাধিকবার হুমকির ফোন আসে। এর সঙ্গে নির্যাতিতার খুন ও ধর্ষণের কোনও যোগ রয়েছে কি না, সেই তদন্তও করতে শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। মূলত এই কারণেই আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে পর পর কয়েকদিন জেরা করা হয়। এর পর তাঁর দেওয়া বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে সিবিআই তাঁর পলিগ্রাফ পরীক্ষা করে। খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.