Advertisement
Advertisement
RG Kar incident

তথ্য ও প্রমাণ লোপাটের ‘আখড়া’ ছিল টালা থানা! আদালতে বিস্ফোরক সিবিআই

টালা থানায় বসেই বেশ কিছু ভুয়া নথি ও রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে, এমনই অভিযোগ সিবিআইয়ের।

CBI says Tala PS allegedly tampered evidence of RG Kar incident
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:September 25, 2024 11:27 pm
  • Updated:September 25, 2024 11:27 pm  

অর্ণব আইচ: তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাটের ‘আখড়া’ ছিল টালা থানা। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তর কলকাতার টালা থানায় বসেই বেশ কিছু ভুয়া নথি ও রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে, এমনই অভিযোগ সিবিআইয়ের। সিবিআই আধিকারিকদের চাঞ্চল‌্যকর দাবি, টালা থানার সিসিটিভির ফুটেজ ঘেঁটে, অভিযুক্ত টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল ও আরও কয়েকজন আধিকারিককে জেরা এবং কিছু নথি পরীক্ষা করে মিলেছে এই তথ‌্য।

আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট, সরকারি কর্তব্যে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ধৃত আর জি করের প্রাক্তন অধ‌্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। তাঁদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানান। জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা। তাঁরা দাবি করেন, এই ধরনের গুরুতর অপরাধের সওয়ালের সময় বহু বাইরের ও অযাচিত ব‌্যক্তি আদালতে উপস্থিত থাকেন। তাই এই সওয়াল ও শুনানি ‘ইন ক‌্যামেরা’ করা হোক। যদিও এই আবেদন খারিজ করেন শিয়ালদহ আদালতের এসিজেএম। সিবিআইয়ের আবেদনমতো এদিন দুই অভিযুক্তকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

Advertisement

নির্দেশিকায় বিচারকের মন্তব‌্য, সন্দীপ ঘোষ একজন চিকিৎসক ও অভিজিৎ মণ্ডল থানার ওসি। তাই তাঁদের সামাজিক অবস্থান কিছুতেই উপেক্ষা করা যায় না। এই অপরাধ অত‌্যন্ত গুরুতর ও তার জন‌্য অভিযুক্তরা চরম শাস্তি পেতে পারে। এই অপরাধ বিরলের মধ্যে বিরলতম। মূল অভিযুক্ত অন‌্য অভিযুক্তদের সঙ্গে এই অপরাধ ঘটাতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ওই অভিযুক্তদের মূল অভিযুক্তর সঙ্গে ঘটনাস্থলে থাকতে হবে। একাধিক ব‌্যক্তি অপরাধ করলে প্রত্যেকেই তাতে যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছে, এমনই আইনে বলা রয়েছে।

সিবিআইয়ের আবেদন, আরও কিছু রিপোর্ট আসা বাকি রয়েছে। সেগুলি পেলে প্রয়োজনমতো পরে ফের তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাতে পারে সিবিআই। সিবিআই জানায়, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পোর্ট ব্লেয়ারে অন‌্য কাজে ব‌্যস্ত রয়েছেন। তাই এদিনও তাঁরা আদালতে আসতে পারেননি। ফলে সন্দীপ ঘোষের নারকো অ‌্যানালিসিস পরীক্ষা ও অভিজিৎ মণ্ডলের পলিগ্রাফ পরীক্ষার সম্মতি নিতে পারেনি আদালত। ৩০ সেপ্টেম্বর এই ব‌্যাপারে সম্মতির জন‌্য বিচারকের সামনে দু’জন হাজিরা দিতে পারেন। এদিন নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে নতুন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের এক জুনিয়র আইনজীবী আদালতে আবেদন জানিয়ে জানতে চান, কীসের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের জন‌্য আইনজীবীরা জামিনের আবেদন জানাচ্ছেন।

এদিকে, এদিন চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করে জেরা করে সিবিআই। ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রণেতা বলে পরিচিত সুশান্তবাবু এখন মেডিক‌্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি। তিনি সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। গত ৯ আগস্ট নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের পর তিনি কেন আর জি করের চারতলায় ঘটনাস্থল সেমিনার হলে যান, তা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। এদিনও ফরেনসিক চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাসকে রাত পর্যন্ত সিবিআই জেরা করে। ময়নাতদন্তের সময় প্রভাব খাটিয়ে কোনও ভুল রিপোর্ট লেখানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে তাঁকে জেরা করা হয়। এদিন মর্গের এক কর্মীকেও তলব করে জেরা করে সিবিআই।

এদিন আদালতে আবেদন করে সিবিআই জানায়, সন্দীপ ও অভিজিৎকে জেরা করে বেশ কিছু নতুন তথ‌্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, টালা থানার ভিতরেই কিছু ভুয়া নথি ও রেকর্ড তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে আসল নথির বিকৃতিও ঘটানো হয়। তার ফলে তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট করা হয়। সন্দীপ ঘোষের নির্দেশে অভিজিৎ মণ্ডল এই কীর্তি করেন বলে অভিযোগ। এর ফলেই জেনারেল ডায়েরি ও এফআইআর করতে দেরি হয়। এই ব‌্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে টালা থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও অভিযুক্তদের মোবাইলের তথ‌্য কেন্দ্রীয় ফরেনসিকে পাঠানো হয়। এই রিপোর্টগুলি দু’একদিনের মধ্যে চলে আসবে। এর পর অভিযুক্তদের ফের হেফাজতে নিতে পারে সিবিআই। আদালতে সিবিআই জানায়, সিবিআইয়ের হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই। অনেক জিনিসই সিবিআইয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সিসিটিভির ফুটেজ ও অন‌্য নথির উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। সেই কারণে সময় লাগতে পারে। অভিযুক্তদের আইনজীবীদের দাবি, তাঁদের গ্রেপ্তারির কোনও ভিত্তি নেই। তাঁদের তলব করার সময়ও জানানো হয়নি তাঁরা অভিযুক্ত, না কি সাক্ষী। তাঁদের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা নিরাময় হওয়ার নয়। গত পাঁচদিনও তাঁদের বিরুদ্ধে কিছুই পায়নি সিবিআই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

  • আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তথ‌্য ও প্রমাণ লোপাট, সরকারি কর্তব্যে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ধৃত আর জি করের প্রাক্তন অধ‌্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়।
  • এদিন চিকিৎসক সুশান্ত রায়কে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করে জেরা করে সিবিআই। ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র প্রণেতা বলে পরিচিত সুশান্তবাবু এখন মেডিক‌্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি।
  • আদালতে আবেদন করে সিবিআই জানায়, সন্দীপ ও অভিজিৎকে জেরা করে বেশ কিছু নতুন তথ‌্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, টালা থানার ভিতরেই কিছু ভুয়া নথি ও রেকর্ড তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে আসল নথির বিকৃতিও ঘটানো হয়।
  • Advertisement