অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, পার্কিং থেকে তোলা টাকাও যেত সন্দীপ ঘোষ ও ঘনিষ্ঠদের পকেটে! আদালতে এমনই দাবি করল সিবিআই। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, সাক্ষীদের থেকে এমনই তথ্য পেয়েছেন তারা। তাঁদের আরও অভিযোগ, হাসপাতালের ভিতরে ক্যাফে তৈরি করা থেকে শুরু করে উন্নয়নের সব কাজ করার কথা পিডব্লিউডির। কিন্তু সেই কাজ স্বাস্থ্যভবনকে না জানিয়ে আফসার আলির নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিন জামিনের আবেদন করা আফসারের আইনজীবী শুনানিতে জামিনের সাওয়াল করে আদালতে জানায়, আফসারের বিরুদ্ধে জালিয়াতির ধারায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু নথিতে তা দেখা যাচ্ছে না। হেফাজতে থাকলেও আফসারকে জেলে গিয়ে জেরাও করা হয়নি, বলেও জানান তিনি। গাড়ি পার্কিংয়ের টাকা তোলার অভিযোগে আফসারের আইনজীবীর সওয়াল, “আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে বাইক পার্কিং থেকে টাকা কামানোর অভিযোগ করেছে সিবিআই। যদি তাই হয় তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? সেই টাকা কি পাওয়া গিয়েছে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কি সেই টাকা আছে? উত্তর না।” ওই নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে দুটো সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ করছে সিবিআই। সেই অভিযোগে আফসারের আইনজীবীর দাবি, সিবিআই সেই সংক্রান্ত নথি পায়নি।
আফসারের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে আদালতে। তাঁর আইনজীবী জানান, আমার মক্কেলকে স্বাস্থ্যভবন সহকারি নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিয়োগ করেছিল। তিনি সন্দীপ ঘোষের ব্যক্তিগত রক্ষী ছিলেন না। তবে কাজের সূত্রে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। এই কথা জানিয়ে আইনজীবীর প্রশ্ন, কিন্তু এখানে কী করে আফসার লাভবান হবেন? সিবিআইকে তা প্রমাণ করতে হবে।
সব শুনে বিচারক জানতে চান আফসার আলিকে কে নিয়োগ করেছিল? সন্দীপ ঘোষ নাকি স্বাস্থ্যভবন? তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ৩জন স্থায়ী কর্মী পদত্যাগ করেন। তারপর আফসার আলি-সহ ৩ জনের নিয়োগ স্থানীয়ভাবে হয়েছিল। আমরা এই ব্যক্তিদের নিয়োগ সম্পর্কে স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দিয়েছিলাম। তার উত্তরে স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, আফসার স্থায়ী কর্মী ছিলেন না। চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন। তিনি সরকারি কর্মী নন।
জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, চার্জশিটে আফসারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করা আছে। নথি জাল করে টেন্ডার পেয়েছে আফসার আলির বেনামী সংস্থা। পার্কিংয়ের টাকা সন্দীপ ও আফসারের কাছে যেত, সেটা সাক্ষী জানিয়েছে। স্বাস্থ্যভবনকে না জানিয়ে আফসার আলির নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন আইনজীবী।
উল্লেখ্য, আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের পর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-সহ গ্রেপ্তার করা হয় নিরাপত্তারক্ষী আফসার আলি ও সন্দীপ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সুমন হাজরাকে। আজ আদালতে সুমনও জামিনের আবেদন জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.