সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সীমান্তে গরু পাচার (Cattle Smuggling) নতুন কোনও ঘটনা নয়। বিশেষত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এ এক চেনা ছবি। কিন্তু সেই আদানপ্রদান কবে, কীভাবে এমন এক আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিল, তদন্ত নেমে সেই অতীতের দিন খুঁজছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। আর এই চক্রের যত কেন্দ্রের দিকে যাওয়া হচ্ছে, ততই হাতে আসছে নতুন নতুন সূত্র। বৃহস্পতিবার গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের (CBI) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল (TMC) জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। তাঁর সঙ্গে গরু পাচারকারী সন্দেহে ধৃত, অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এনামুল হক, সতীশ কুমারদের সরাসরি যোগের অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এ রাজ্যে গরু পাচার মামলার ইতিবৃত্ত একবার ফিরে দেখা যাক।
শুধু পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) নয়, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলি থেকেও সীমান্ত পারাপার করে গরু পাচার হয়ে থাকে। মূলত বাংলাদেশের সঙ্গে এই অবৈধ ব্যবসা চলে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে বিশাল মাপের গরু মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের হাত ধরে রাতে অন্ধকারে পার হয়ে যায় ওপারে। পশ্চিমবঙ্গের গরুর আকার তুলনায় ছোট। মোটের উপর প্রতি গরুতে ৪০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় লেনদেন হত। এখন প্রশ্ন হল, এই লেনদেন চক্রের মধ্যে ঠিক কারা কারা জড়িত?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই চাঞ্চল্যকর সমস্ত তথ্য উঠে আসছে। এ রাজ্যে প্রথম গরু পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িত সন্দেহে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হন ব্যবসায়ী এনামুল হক। তার সূত্র ধরে জালে ধরা পড়ে প্রাক্তন বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। সেই প্রথম গরু পাচারে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি ব্যবসায় যে বিএসএফেরও মদত রয়েছে, তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য যৌক্তিকভাবে দেখলে এই বিষয়টি বোঝা খুব একটা শক্ত নয়। বিএসএফের পাশাপাশি শুল্কবিভাগের প্রচ্ছন্ন অনুমতি ছাড়া এই ব্যবসা কোনওভাবেই রমরমিয়ে চলতে পারে না। এরপরও প্রশ্ন, অবৈধভাবে টাকা রোজগারটা হয় কীভাবে? একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বড় আকারের গরুগুলিকে খাতায়-কলমে ছোট বলে পাচার করা হয় সীমান্তে। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে আর্থিক লেনদেন হয় মোটা অঙ্কের, অর্থাৎ একটি বড় গরুর দামের নিরিখেই। আর সেখানেই বড়সড় লাভ করে পাচারকারীরা। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যবসায়ী এনামুল হক একেকটি গরুর জন্য বিএসএফকে ২০০০ টাকা এবং শুল্ক দপ্তরকে ৫০০ টাকা করে দিত। এছাড়া নানা সময়ে বিএসএফের একাংশ এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ত। ২০১৮ সাল থেকে এর সূত্র খোঁজা হচ্ছে।
ভারত-বাংলাদেশের মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বিএসএফ (BSF) কমান্ডান্ট সতীশ কুমার কর্মরত থাকার সময় ২০ হাজার গরু নিয়ে একটি গাড়ি আটক হয়েছিল। কিন্তু তা বাজেয়াপ্ত হয়নি। সিবিআইয়ের এফআইআরে এমনই উল্লেখ ছিল। সতীশ কুমার গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেরা করে এমনই নানা বিস্ফোরক তথ্য উঠে আসে। একে একে গ্রেপ্তার হয় তৃণমূলের যুব নেতা বলে পরিচিত বিনয় মিশ্র, বিকাশ মিশ্ররা। তাতেই স্পষ্ট গোটা চক্রটির নানা মাথা রয়েছে। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাঁর সঙ্গে সতীশ কুমারের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। আসলে, জুন মাসে অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ সায়গল হোসেনকে গ্রেপ্তারির পরই তাঁর দিকে নজর ঘোরায় সিবিআই। খুব অল্প সময়ে সায়গলের বিপুল সম্পত্তির উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তদন্তকারীরা। কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে তাঁর কলরেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, ধৃত ব্যবসায়ী এনামুল হক ও অনুব্রতর সঙ্গে সায়গল হোসেনের প্রচুর কথোপকথন হত। সেসবের নিরিখেই শেষমেশ গরু পাচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘সন্দেহভাজন’ অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.