ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: বইয়ের নেশায় হাতছাড়া চারপেয়ে। তারপর খোঁজ, খোঁজ, খোঁজ। এদিকে প্রভু হারিয়ে সে বেচারা বিহ্বল। সেন্ট্রাল পার্ক মেলা (Kolkata International Book Fair) প্রাঙ্গণে তখন সন্ধে নেমেছে। মাইকে গমগমে ঘোষণা, ‘‘যেখানেই থাকুন অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে চলে আসুন। এখানে ও আপনাদের জন্য অপেক্ষায়।’’ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে হয়তো কোনও একরত্তি। এমনটাই ভেবেছিলেন সকলে। আচমকা মাইকে তারস্বরে আওয়াজ। ‘মিয়াও’। মানুষ নয়, মার্জার! হতচকিত বইপ্রেমীরা।
নাম জানে না কেউ। গলায় বাঁধা লাল সুতো। ঘিয়ের উপর কালো ডোরা কাটা। পাশ থেকে কে মশকরা করে, ‘‘কী নাম তোমার?’’ মিউ করে একটা শব্দ বেরোয়। এরই মধ্যে ঝপ করে তাকে কোলে তুলে নেয় এক তরুণী। তৃষা চৌধুরি পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। একা চারপেয়েকে সে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। বিধাননগর পুলিশ (Bidhannagar Police) কন্ট্রোল রুম খুলেছে মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে তৃষা নিয়ে আসেন বিড়ালটিকে। হারিয়ে যাওয়া শিশুর দায়িত্ব এক ব্যাপার। কিন্তু বিড়াল?
পুলিশ কন্ট্রোলের রুমের পক্ষ থেকে তৃষাকে বলা হয়, ‘‘দেখুন বিড়াল রাখার এক্তিয়ার নেই আমাদের। আপনি বরং বাড়ি নিয়ে যান। আপনার নাম-ঠিকানা এখানে দিয়ে যান। মালিক এলে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলব।’’ কিন্তু সেখানেও সমস্যা। আদতে ত্রিপুরার বাসিন্দা তৃষা কলকাতায় এয়ারপোর্ট এলাকায় থাকেন। বাড়িতে মাকে ফোন করে তাঁর আকুতি ‘‘বইমেলায় একটা বিড়াল পেয়েছি। নিয়ে আসি?’’ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করে দেন মা।
এদিকে ততক্ষণে অনেকেই এগিয়ে দিয়েছে বিস্কুটের প্যাকেট। ফিশ ফ্রাইয়ের টুকরো। না হোক চেনা মুখ। সড়াৎ করে তা মুখে পুরেছে মালিক হারানো মার্জার। এদিকে চারিদিকে হইহই ব্যাপার। বিড়াল হারিয়ে গিয়েছে শুনে উৎসুক মুখের আনাগোনা বাড়তে থাকে অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে। শেষমেশ তৃষাকে একটা উপায় বাতলে দেন বিধাননগর পুলিশ কেন্দ্রের কয়েকজন। কাছেই বনদফতরের অফিস। সেখানে গিয়ে জমা দিয়ে আসা যায় বিড়ালটা। পরে না হয় উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে মালিক নিয়ে যাবেন।
কিন্তু কলকাতায় আনকোরা তৃষা বনদফতরের অফিস চেনেন না। অনেককেই অনুরোধ করেন, ‘‘আপনারা একটু দিয়ে আসুন না..।’’ মালিক হারানো বিড়ালের মুড দেখে যদিও কেউ তাকে কোলে নিতে সাহস করেনি। ঘণ্টাখানেকের দৌড়াদৌড়ির পর অবশেষে মালিক খুঁজে পেয়েছে বিড়াল। বইমেলার ভিড়ে কচিকাঁচা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া অহরহ। কিন্তু বিড়াল? পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এমন ঘটনা কস্মিনকালেও শুনিনি। তবে শেষমেশ যে মালিক খুঁজে পেয়েছে, সেটাই বাঁচোয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.