গৌতম ব্রহ্ম: এ জীবন তো শুধু নিজে বাঁচার জন্য নয়। অপরকে বাঁচানোর জন্যও। সেই দুর্মর তাগিদেই বেকাবু শরীরকে বশে এনে পরহিতের নজির গড়েছেন এ শহরের সত্তর ছুঁইছুঁই এক বৃদ্ধা, যিনি নিজেও ক্যানসার আক্রান্ত।
দক্ষিণ শহরতলির গান্ধী কলোনির বাসিন্দা সীমারেখা রায়চৌধুরির কথা হচ্ছে। ডান হাত তাঁর অবশ। আঙুলগুলো ঠিকমতো নড়ে না। হামেশা কামড় বসায় অসহ্য যন্ত্রণা। তাই নিয়েই সুন্দরবনের আমফান-দুর্গতদের জন্য কাপড় কেটে মাস্ক বানিয়েছেন। পরোপকারের অদম্য স্পৃহায় জোরে ঠেলে সরিয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
কে বলবে উনি ক্যানসার আক্রান্ত? সত্যি, অবাক হতে হয়! লকডাউনের কলকাতায় সবাই যখন গৃহবন্দি, তখন নিজেই গাড়ি নিয়ে গান্ধী কলোনির বাড়ি থেকে কেমোথেরাপি নিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছেন। যে নারী স্বামীকে হারানোর পরের বছর ছেলের বিয়ে দিয়ে বউভাতের পরের দিন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করান, তিনি তো সীমা অতিক্রম করবেনই।
এবারও অসুস্থ শরীরে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ালেন সীমারেখাদেবী। আমফান দুর্গতদের জন্য কাঁপা হাতেই পুরনো কাপড় কেটে তৈরি করেছেন মাস্ক। চালিয়েছেন সেলাই মেশিন। তাঁর তৈরি ৩১টি মাস্ক সোমবার সুন্দরবনের আমফান-দুর্গত পরিবারের হাতে তুলে দিল ‘দিশা ফর ক্যানসার’। এদিন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ডা. অগ্নিমিত্রা গিরি সরকার কুলতলির আমরাবেড়িয়া গ্রামে ৫১টি পরিবারের হাতে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। চাল, ডাল, সাবান, ওষুধের সঙ্গে ছিল সীমারেখাদেবীর তৈরি মাস্কও। অগ্নিমিত্রা জানালেন, ইচ্ছে থাকলে অসুস্থতা যে বাধা হতে পারে না, তার উদাহরণ এই আটষট্টি বছরের ক্যানসার আক্রান্ত নারী।
২০১২ সালে পিজি হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট হিসাবে অবসর নেন সীমারেখাদেবী। ওই বছরই স্বামী উৎপল রায়চৌধুরিকে হারান। পরের বছর ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে। একাকীত্ব, ভয়, অসুস্থতা – কোনওটাই অবশ্য দমাতে পারেনি। ওই বছরই ছোট ছেলের বিয়ে দেন। বউভাতের পরের দিন অস্ত্রোপচারের জন্য ভরতি হন হাসপাতালে। সীমারেখাদেবী জানিয়েছেন, “কেমো—রেডিওথেরাপি নিয়ে নিজেকে সুস্থ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু ফের তাল কাটল। ২০১৯ সালে ডান হাতে প্রবল যন্ত্রণা শুরু হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায়, ক্যানসার আবার ফিরে এসেছে। হাতের লসিকাগ্রন্থি থেকে ফুসফুসেও পৌঁছে গিয়েছে ক্যানসারের থাবা।” যদিও হার মানতে রাজি নন দুই ছেলের জননী। বললেন, “ক্যানসারকে আবার হারাব। আবার মাস্ক বানাব। অন্যকে ভাল রাখাতেই যে অপার আনন্দ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.