Advertisement
Advertisement

Breaking News

CPM

আবারও সভা-মিছিলে ভিড়, হারানো ভোট কি ফেরাতে পারবে সিপিএম?

বামেদের সভায় আগের থেকে বেশি লোক হচ্ছে কেন?

Can CPM win back voters as Bengal gears up for panchayat polls | Sangbad Pratidin

প্রতীকী ছবি।

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:June 10, 2023 9:51 am
  • Updated:June 10, 2023 11:46 am  

অপরাজিতা সেন: সিপিএমের মিটিং-মিছিলে ইদানীং কিছু লোক দেখা যাচ্ছে, সেই সুবাদে মূলত টিভির টক শো, ফেসবুক, টুইটারে থাকা কিছু কমরেডের পুরনো ঔদ্ধত‌্যপূর্ণ ভাষা ফিরে আসছে। লোকসভা, বিধানসভায় শূন‌্য পাওয়া সিপিএমের হাবভাব এরকম, যে এই বুঝি তারা আবার ক্ষমতায় ফিরে এল।

এটা ঘটনা যে অতিসম্প্রতি সিপিএম এবং তার ছাত্র, যুবদের আগের থেকে সক্রিয় মনে হচ্ছে। কিছু ছবি আসছে, যা দেখে কিছু কমরেড একটু উৎসাহিতও হতে পারেন। ‘গণশক্তি’র দুইয়ের পাতায় পার্টি কর্মসূচির নোটিস ২০১১-র পর প্রায় অদৃশ‌্য হয়ে গিয়েছিল, আপাতত অনেকটা বেড়েছে। এখানে একজোড়া জরুরি প্রশ্ন আছে। এক, সিপিএমের সভা, মিছিলে কিছু লোক বাড়ছে কেন, কীভাবে? দুই, কর্মসূচিতে লোক বাড়লেও ভোট বাড়বে কি, বলা ভাল হারানো ভোট কি ফেরাতে পারবে সিপিএম? এই দুই প্রশ্নের উত্তরই পরস্পরের সঙ্গে জড়িত।

Advertisement

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ হল, সিপিএমের কোনও কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত মিটিং-মিছিলে লোক তো আগেও হয়েছে। ব্রিগেডও ভরিয়েছে। কিন্তু, তার পরেও আসনসংখ‌্যা শূন‌্য। তাহলে মিটিং-মিছিলে লোক মানেই ভোটে জয়, তা কিন্তু নয়। বড় উদাহরণ মমতা বন্দ্য়োপাধ‌্যায়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জনসমুদ্র দেখিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে, কিন্তু রাজ্য়ে পরিবর্তন হয়েছে ২০১১ সালে। মমতা মানেই জনতা ছিল, কিন্তু জনতা মানেই ভোট, এটা ভাবা ভুল। ভোট এমন একটা সিদ্ধান্ত এবং প্রক্রিয়া, যেটা জনসভার ছবি দেখিয়ে হয় না। সিপিএমের ভরা ব্রিগেড, তাঁরা কি সবাই সিপিএমকে ভোট দিয়েছিলেন? কেন্দ্রীয় কোনও মিটিং-মিছিলে হাতে লালঝান্ডা, কিন্তু ফিরে নিজের বুথে? সেখানে নিজের পাড়ায় সংগঠনটা করেন তো? প্রশ্ন থাকছে।

[আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কর্মী খুনে আটক ২, নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার কথা অধীরের]

সিপিএমের ভোট কমেছে, আসন শূন‌্য। অস্তিত্ব রক্ষায় একদা শত্রু কংগ্রেস বা অন‌্য একটি সংগঠনের পা ধরতে হচ্ছে। বাম শরিকরা তো লুপ্তপ্রায়। কিন্তু, সিপিএমের ভোটটা গেল কোথায়? এর একটা ছোট অংশ উন্নয়ন, পরিষেবায় সন্তুষ্ট হয়ে সরাসরি তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। ক’দিন আগে সোশ‌্যাল মিডিয়ায় একটা ছবি দেখলাম, লালঝান্ডার সাইকেল মিছিল, একাধিক সাইকেলের লোগো দেখে বোঝা যাচ্ছে সবুজসাথীর সাইকেল। ভোটে এর তো কিছু প্রভাব পড়বেই।

তবে সিপিএমের বড় অংশের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়ে কমরেডরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। ২০২১-এ রাম আসুক, ২০২৬-এ বাম এই কানাঘুষো করতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করেছেন। সিপিএমের ভোট কমেছে, বিজেপির বেড়েছে। তৃণমূলের বিপুল জয় ঠেকানো যায়নি, সিপিএম শূন‌্য হয়ে গিয়েছে। এখন মিটিং-মিছিল যতই হোক, আসল কথা হল সিপিএম কি বিজেপির কাছ থেকে তার ভোট ফেরাতে পারবে? কমরেডদের জমায়েতের একটা বড় অংশই তো বিজেপির ভোটার, পরিসংখ‌্যানের আনুপাতিক হার সেটাই বলছে। ফলে, বড় সমাবেশের ছবি আর বুথভিত্তিক ভোটের প্রক্রিয়া, এই দুই বিষয়ের পার্থক‌্য স্বীকার করতেই হবে।

তাহলে বামেদের সভায় আগের থেকে বেশি লোক হচ্ছে কেন? কারণ, তৃণমূল সরকার যতই ভাল কাজ করুক, যতই কার্যত বাংলার প্রতি পরিবারে পরিষেবা পৌঁছে দিক, প্রাকৃতিক নিয়মে এই সামাজিক সিস্টেমে প্রতিষ্ঠানবিরোধী কিছু ইস্য়ু থাকবেই। যুগে যুগে সর্বত্র এটা ছিল, আছে, থাকবে। আর এটাই গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনীতির পরিসর। ২০১১-র পর থেকে হতাশ, ভগ্নহৃদয় সিপিএম ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। সিনিয়র নেতারা কেউ প্রয়াত, কেউ অসুস্থ, কেউ বৃদ্ধ। নেতৃত্বের সংকট বিরাট। আত্মবিশ্বাস তলানিতে। সেই সুযোগে বিজেপি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে গিয়ে সিপিএম ভোট দিয়েছে বিজেপিকে। কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছে, যা আদি কমরেডদের হজম হয়নি। মূল শত্রু কে, বিজেপি না তৃণমূল; কিংবা কেরলে কংগ্রেস শত্রু হলে বাংলায় মিত্র কীভাবে, এই সব বিভ্রান্তির চোরাবালিতে ছিলেন কমরেডরা। এখন, যখন সিপিএম উপলব্ধি করছে যে বিজেপিকে বাংলার মানুষ গ্রহণ করছেন না, তখন, বহু সময় নষ্টের পর এখন, বিরোধী দলের পরিসরটা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে যে অংশ তৃণমূলের সমর্থক নয়, আবার বিজেপিরও বিরোধী, তাদের এক জায়গায় করতে চেষ্টা করছে সিপিএম। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ভোটে তারা বিজেপিকে তৃতীয় করে নিজেরা দ্বিতীয় স্থানেও এসেছে।

বাংলায় একদা সিপিএমের একটা সাংগঠনিক কাঠামো ছিল, হয়তো ক্ষয়িষ্ণু; কিন্তু বিজেপি তো তার থেকেও পিছিয়ে, তারা আছে শুধু হাওয়ায়; আর তাদের গ‌্যাসবেলুন ফুলেছে সিপিএমের ভোটে। ফলে, সিপিএম যদি মরিয়া হয়ে তাদের মিটিং-মিছিলে কিছু লোক আনতে চায়, এখন খানিকটা সম্ভব। আদি কট্টর কমরেডরা আছেন, লোকদেখানো সঙ্গে থাকা কমরেডও কিছু থাকবেন। কিন্তু, ভোটের ভবিষ‌্যৎ এখনও অনিশ্চিত।

কিন্তু, বঙ্গীয় কমরেডকুলের কাছে আরও বিভ্রান্তির অবকাশ আছে। মুখে যতই বিজেপির বিরোধিতা হোক, বহু জায়গায় অন্ধ তৃণমূল বিরেধিতা থেকে স্থানীয়ভাবে বিজেপি, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে সিপিএম। এর ফায়দায় কিছু ভোট বিজেপি বা কংগ্রেস পেলেও সিপিএমের লাভ হচ্ছে না। এককভাবে লড়ার নীতি, সাহস, আত্মবিশ্বাস ও যোগ‌্য নেতৃত্ব যতক্ষণ না প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে পার্টিতে, ততক্ষণ আসল ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন। প্রতিষ্ঠানবিরোধী যে ইস্য়ুগুলির মঞ্চে বিরোধী সব দল যাচ্ছে, এমনকী, কোর্টেও আইনজীবীদের হাত ধরাধরি, তার প্রচারের অনুপাতে ভোটের লাভ সিপিএমের ঘরে আসছে না।

সিপিএমের মুখ বলতে এখন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা। বিমান বসুর বয়স হয়েছে। এরপরই মূলত নবীনরা। ছাত্র-যুব থেকে আসা মীনাক্ষী মুখোপাধ‌্যায়, দীপ্সিতা ধর, সৃজন ভট্টাচার্য, সায়নদীপ মিত্র, কলতান দাশগুপ্ত, ময়ূখ বিশ্বাস, শতরূপ ঘোষ, কৌস্তভ চট্টোপাধ‌্যায়রা। মীনাক্ষী দলের নতুন প্রজন্মের মধ্য়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, বক্তৃতাও বেশ ভাল। কিন্তু এঁদের পরিণত রাজনৈতিক সংগঠক হয়ে উঠতে আরও সময় লাগবে। কোর্টে বিকাশ ভট্টাচার্য বা তরুণ সব‌্যসাচী চট্টোপাধ‌্যায়, সায়ন বন্দ্য়োপাধ‌্যায়রা প্রচারে থাকলেও ভোট টানার ক্ষেত্রে এঁরা এখনও পর্যন্ত ফ‌্যাক্টর নন।

[আরও পড়ুন: জাতীয় পতাকাকে পাখা হিসাবে ব্যবহার, বিতর্কে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ]

আজকের মিডিয়ার যুগে শূন‌্য পেলেও সব চ‌্যানেলের টক শোতে যথেষ্ট জায়গা পায় সিপিএম। সোশ‌্যাল মিডিয়াতেও তারা আছে। কিন্তু এতে প্রচার, পরিচিতি হলেও ভোট ফিরবে কি? এখন সিপিএমের সবচেয়ে বড় চ‌্যালেঞ্জ, এক নম্বর জায়গা দূরের কথা, অন্তত দ্বিতীয় হওয়া। কিন্তু, মূল শত্রু নির্ধারণে বিভ্রান্তি থাকলে জল যতই ঘোলা থাকুক, তাতে মাছ ধরার কাজটা কঠিনই থেকে যাবে। বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি অপব‌্যবহার করে তৃণমূল নেতাদের হয়রান করবে, আর সেই ভরসায় সিপিএম উদ্বাহু নৃত‌্য করবে, তাতে বাম ভোট বাড়বে কি না, কমরেডরা ভেবে দেখবেন। বিজেপি, কংগ্রেসের ভরসায় ঘুরে দাঁড়ানোর ভাবনা কি যুক্তিযুক্ত? আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও পরীক্ষা দিতে হবে সিপিএমকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement