নব্যেন্দু হাজরা: মেট্রোয় বাড়ছে বিনা টিকিটের যাত্রী। সচেতনতায় চলছে প্রচার। কিন্তু সেই প্রচারের বাংলা ভাষা দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় যাত্রীদের। সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি প্রকাশ পেতেই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কেমন বাংলা? বারবার মেট্রোয় কেন বাংলা ভাষার উপর নানাভাবে আঘাত নেমে আসে?
বিনা টিকিটের যাত্রী রুখতে প্রচারে মেট্রো স্টেশনে লেখা রয়েছে, ”বিশাল টিকিট পরীক্ষা অভিযান চলছে। বিব্রত ও লজ্জিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে সর্বদা মেট্রোতে সঠিক টিকিট নিয়ে চড়ুন।” বাংলা ভাষার এমন বহর দেখেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলছেন, ‘বিশাল টিকিট পরীক্ষা অভিযান’ এটা কেমন বাংলা লেখা? এই প্রথম নয়, এর আগেও মেট্রোয় বাংলা ভাষার অদ্ভুত ব্যবহার হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনের লিফটের ভিতরে এই ‘আপার কনকোর্স’ এলাকাকে বাংলায় লেখা হয়েছে ‘উচ্চ মোড়া’, মেজেনাইন ফ্লোরকে বাংলায় লেখা ‘মাঝে তলা’। যাকে সাধারণত মধ্যবর্তী তল বলা হয়।
যেখানে পরিষেবা গ্রহণকারীদের সিংহভাগের ভাষাই বাংলা, সেখানে বাংলা ভাষার প্রতি এই অবজ্ঞা নিয়ে অনেকেই সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। শিয়ালদহ মেট্রো উদ্বোধনের সময়ও স্টেশনে লেখা বানানে বিস্তর ভুল ছিল। তবে ভাষা বিভ্রান্তির মাঝেও মেট্রোতে যে বিনা টিকিটের যাত্রী বাড়ছে, তা মানছেন মেট্রো কর্তারাই। তাঁদের দাবি, টোকেন বা স্মার্ট কার্ডের কোনওটিই নেই, এমন যাত্রী খুব একটা থাকে না। বরং যাত্রাপথের যথাযথ মূল্যের থেকে কম দামের টোকেন ব্যবহার করেন, সফরের উদাহরণ অসংখ্য। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে ধরা পড়ে জরিমানা দেন অনেকে। আড়াইশো টাকা জরিমানা ছাড়াও ওই নির্দিষ্ট দূরত্বের ভাড়াও তাঁকে জরিমানা দিতে হয়।
স্মার্ট গেট খোলার সময়ে দেখা যাচ্ছে, এক যাত্রীর গা ঘেঁষে (টেল গেটিং) অন্য যাত্রীর পেরনোর চেষ্টাই বেশি। যাত্রীদের এই ‘ফাঁকিবাজি’ রুখতে চলছে প্রচার। কিন্তু সেই প্রচারে বাংলা ভাষার এই অপব্যবহার কেন? সে প্রশ্ন উঠছেই। মেট্রোর দাবি, মেট্রোয় অবাঙালি কর্মীদের হাতেই প্রশাসনিক বেশিরভাগ জিনিস। তা-ই এই বিভ্রাট। বাংলায় থেকে বাংলার অমর্যাদা। তাঁরা গুগল ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে ইংরেজি থেকে বাংলা করছে। অথবা হিন্দির মতো করে বাংলা। তাতেই হচ্ছে বাংলা ভাষার সর্বনাশ।
মেট্রোরেলের প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্তর কথায়, “বাংলা ভাষার অপমান মেট্রোয় এই প্রথম নয়। আসলে অবাঙালি লোকেদের বাংলা করতে দিলে যা হয়, তা-ই হচ্ছে।” জাতীয় বাংলা পরিষদের সভাপতি ডাক্তার অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, “ভাষার ব্যাকরণ ঠিক জানা না থাকলে এরকম ভাষাই প্রয়োগ করা হবে। এভাবে ভাষার ব্যবহার খুবই নিন্দনীয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.