অভিরূপ দাস: ফোঁটা ফোঁটা করে পড়েই চলেছে। থামার বিরাম নেই। রাস্তাঘাটে যখন-তখন অনভিপ্রেত পরিস্থিতি। সদ্যোজাত একরত্তি হলে মানা যায়। কিন্তু ৪৬ এ! কাপড়ে প্রস্রাব। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অঞ্জনা সেন ভুগছিলেন সামাজিক হীনমন্যতায়। আত্মীয়পরিজনদের বাড়িতে গিয়ে থাকার উপায় নেই। যখন-তখন যে প্রস্রাব হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাটেও লজ্জাজনক পরিস্থিতি। ব্রীড়ার চাদর সরিয়ে উপশম দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। শুধু তাই নয় ইউরোলজি সংক্রান্ত এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিল স্ত্রীরোগ বিভাগের এক ঝাঁক চিকিৎসক। নেতৃত্বে সার্জন অধ্যাপক ডা. তারাশঙ্কর বাগ। অস্ত্রোপচারে তাঁকে সাহায্য করেছেন স্ত্রীরোগ বিভাগের সার্জন ডা. শ্যামলী দত্ত, ডা. পলাশ মজুমদার, ডা. প্রিয়াঙ্কা সান্যাল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঋতুস্রাবে অত্যধিক রক্তপাত হত অঞ্জনাদেবীর। তার সঙ্গে মারাত্মক পেটে ব্যথা। সাধারণত প্রতিটি ঋতুচক্রে গড়ে ৩০-৪০ মিলিলিটার রক্ত বেরোয়। কিন্তু যখন ৮০ মিলিলিটার বা তার থেকে বেশি রক্তপাত হয়, তখনই তাকে ভারী রক্তক্ষরণ বা হেভি মেনস্ট্রুয়াল ব্লিডিং বলা হয়। সে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেসময় টোটাল ল্যাপারোস্কোপিক হিসটেরেকটমি কর হয়। রক্তপাতের সমস্যা মিটলেও শুরু হয় অন্য সমস্যা। ‘ইউরিন লিকেজ’। তাও আবার যৌনাঙ্গ দিয়ে! সে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আসেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. তারাশঙ্কর বাগ জানিয়েছেন, ঘটনাটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এমন ঘটনা চলতে থাকলে হীনমন্যতা আসা স্বাভাবিক। ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন অঞ্জনাদেবীও। মেডিক্যাল কলেজে তড়িঘড়ি তাঁর সিস্টোস্কোপি করা হয়। দেখা যায় এমন অস্বাভাবিক ঘটনার নেপথ্যে ফিসচুলা। ডা. প্রিয়াঙ্কা স্যানাল জানিয়েছেন, প্রস্রাবের নালি আর ভ্যাজাইনার মাঝখানে হয়েছিল ফিসচুলাটা। ফিসচুলার অর্থ দু’দিক খোলা নালি। তার ফলেই প্রস্রাব সরাসরি ফিসচুলা দিয়ে ভ্যাজাইনায় চলে আসছিল। দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ডা. তারাশঙ্কর বাগ। সাধারণত এই অস্ত্রোপচার করেন ইউরোলজি বিভাগের সার্জনরা। সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এই অসাধ্য সাধন করলেন স্ত্রী রোগ বিভাগের শল্য চিকিৎসকরা। স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. স্বপন জানার তত্ত্বাবধানে হয় জটিল অস্ত্রোপচার।
চিকিৎসা পরিভাষায় এ অস্ত্রোপচারের নাম ইউরেটর রিইমপ্ল্যান্টেশন। অর্থাৎ মূত্রনালির পুনর্গঠন। টানা দেড়ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ অঞ্জনাদেবী। ডা. তারাশঙ্কর বাগ জানিয়েছেন, ফিসচুলাটাকে সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মূত্রনালিকে প্রসাবের থলির সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। টানা ১৪ দিন চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন রোগী। আপাতত তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.