গোবিন্দ রায়: ছিঁড়ে যাওয়া দাম্পত্য সম্পর্কের সুতো জুড়তে মানবিক চেহারা দেখাল আদালত। তিক্ততার ধূসর আগাছা সরিয়ে দম্পতির সাড়ে আট বছরের পুরনো গাঁটছড়া যাতে ফের সবুজে সবুজ উঠতে পারে, সে জন্য যুগলকে দু’দিন প্রকৃতির মাঝে নিভৃতে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি কৌশিক চন্দ। শুধু তা-ই নয়, স্থান নির্বাচনও করে দিয়েছেন। ওঁদের জন্য নিউটাউনের ইকো পার্ক লাগোয়া একটি বাড়ি বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন খোদ বিচারপতি।
তাঁর পরামর্শ পত্রপাঠ মেনে নিয়েছেন দম্পতি। আদালতকে তাঁরা জানিয়েছেন, নিজেদের খরচে দু’রাত ওঁরা ওখানে কাটাবেন। চেষ্টা করবেন দাম্পত্যের হৃত মাধুর্য পুনরুদ্ধারের। আদালত সূত্রের খবর, যুগলের একজন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা, অন্যজন দক্ষিণের। উত্তর কলকাতার বেলেঘাটার অর্জুনের সঙ্গে দক্ষিণের বেহালার অপর্ণার (দু’টিই পরিবর্তিত নাম) প্রণয়ের সূচনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাফ যুগ প্রেম করার পরে ঘর বাঁধা। দু’জনেই শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরিজীবী। অপর্ণা সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নামি আইটি কোম্পানির কর্মী, অর্জুন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী। কিন্তু দাম্পত্য জীবন জমিয়ে শুরু হতে না হতেই, বিয়ের তিন মাসের মাথায় ছন্দপতন ঘটে। কিছু ভুল বোঝাবুঝি থেকে সম্পর্কে চিড়।
সেই ইস্তক সাড়ে আট বছরের বৈবাহিক জীবনে দূরত্ব শুধু বেড়েছে বই কমেনি। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিয়ের তিন মাসের মাথায় অপর্ণা বাপের বাড়িতে ফিরে যান। তার প্রায় সাড়ে সাত বছর বাদে অয়নের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ, বিয়ের গয়না-সহ বেশ কিছু সামগ্রী অর্জুন আটকে রেখেছেন। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় অর্জুন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলাতেই দু’জনকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি চন্দ। দম্পতিকে জানান, তলবের একটাই উদ্দেশ্য – যদি ওঁদের ফের মিলমিশ করিয়ে দেওয়া যায়। ঘর ভাঙা খুব সহজ, গড়ে তোলা কঠিন।
এরপর বিচারপতি অর্জুনের কাছে জানতে চান, “আপনি সোনার গয়না ফেরাননি কেন? দিয়ে দিন ওঁকে।” অর্জুনের উত্তর, “পুরোটা সত্যি নয়।”
দু’জনের উদ্দেশে বিচারপতির আহ্বান, “চেষ্টা করুন না, আবারও একসঙ্গে থাকতে! আপনারা শিক্ষিত, রুচিশীল, রোজগেরে। আপনারা চাইলে আমি একটু চেষ্টা করতে পারি।” শুনে অর্জুনের সপাট প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি তো চাই, ও ফিরে আসুক। ফিরে এলে আবার জমিয়ে সংসার করতে পারব আমরা।” লাজুক হেসে অপর্ণাও সম্মতি জানান। মানে, মিঞা-বিবি রাজি! বিচারপতি তৎক্ষণাৎ চেম্বার জুনিয়রকে বলেন, কলকাতার বুকে মনোমুগ্ধকর জায়গা খুঁজতে। সব কিছু ঠিক থাকলে শনিবার সেখানে যাচ্ছেন অর্জুন-অপর্ণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.