শুভঙ্কর বসু: নারদ মামলা (Narada Case) কি অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত হবে? তা নিয়ে সোমবারও সিদ্ধান্ত হল না। মামলার পরবর্তী শুনানি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায়। আদালত সূত্রে খবর, বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি নিয়ে আপত্তি জানায় রাজ্য। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয় বলে খবর। শুনানির পর পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ কোনও রায় দেয়নি।
বাংলায় নারদ মামলার শুনানি চালানোর মতো পরিস্থিতি নেই। তাই এই মামলার শুনানি অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করার আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয় সিবিআই। পরে এই মামলা স্থানান্তরিত হয় বৃহত্তর বেঞ্চে। সোমবার সকাল ১১টায় এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ব্যস্ত থাকায় শুনানির সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। বেলা দুটোয় নারদ মামলার শুনানি শুরু হয়।
শুনানি শুরু হতেই কলকাতা হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলা যাতে না শোনা হয় তার আবেদন জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তাঁর দাবি, “বৃহত্তর বেঞ্চ এই মামলা শুনতে পারে না।” শুরুতেই তিনটি বিষয়ে উত্থাপন করেন তিনি। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, “গত ১৭ মে অর্থাৎ প্রথম যখন এই মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়, তখন সবপক্ষের কথা শোনা হয়নি। সকলের কথা না শুনেই রায় দেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “ফৌজদারি বিধির ৪০৭ নম্বর ধারায় সিবিআই আবেদন করেছে এই মামলা অন্যত্র স্থানান্তর করার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই মূল আবেদন এই আদালত গ্রহণ করতে পারে না। মামলা স্থানান্তরের নির্দেশও এই আদালত দিতে পারে না।” এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা তৈরি হয়।
এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর বেঞ্চ সকলকে আশ্বস্ত করে জানায়, মামলাটি যখন এসেই পড়েছে তখন সবপক্ষের মতামত আমরা শুনব। তবু নিজের মতামতে অনড় থাকেন কিশোর দত্ত। তাঁর কথায়, “এই মামলার শুনানির এক্তিয়ার বৃহত্তর বেঞ্চের নেই।” তখন বৃহত্তর বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, এই মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল সিবিআই। তখন প্রশ্ন না করে এতদিন পর এই মামলার শুনানির এক্তিয়ার হাই কোর্টের বেঞ্চের আছে কি না তা নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছেন কেন? আপনাদের এগুলি সুপ্রিম কোর্টেই বলা উচিৎ ছিল।” তাঁকে সমর্থন করে আরেক বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন, “বিষয়াটা যখন আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা পিছিয়ে যেতে পারি না। আমরা আগে বিষয়টি নিয়ে বিচার করি তারপর আমাদের এ বিষয়ে শুনানির এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়ে আপনারা প্রশ্ন তুলবেন।” একই সুরে কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, “একই বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে আলোচনা হচ্ছে। এতে আদালতের সময় নষ্ট হচ্ছে। আপনার যদি এই উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আপনি তা চালিয়ে যেতে পারেন।”
এর পর সরব হন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা। তিনি বলেন, “আমরা আবেদনকারী। আমাদের মতামত প্রকাশ করতে সুযোগ দেওয়া হোক।” পালটা সরব হন কিশোর দত্ত। তাঁর কথায়, “আবেদনকারীরা ইতিমধ্যে বিতর্ক তুলে দিয়েছেন। তাই বলব, আবেদনকারীরা আরও সতর্ক হয়ে আবেদন করলে আরও যুক্তিযুক্ত হত।” তুষার মেহতা জানান, “আমরা যা দাবি করেছি তা অনলাইনে জমা দিচ্ছি। কিন্তু তা ঠিকভাবে বিচারপতিদের বেঞ্চে এসে পৌঁছয়নি।” যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে সেই নথি এসে পৌঁছয়নি বলে খবর। সেই সময় আরেক বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বলেন, “আপনার আবেদনগুলি আপনি জমা দিচ্ছেন কিন্তু তা ঠিকঠাকভাবে আসছে না। ক্রমেই আসছে। যা দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা শিশু। যে দিনকে দিন বেড়ে উঠছে।” অভিযুক্ত আইনজীবীও জানান সমস্ত নথি তিনি পাননি। নথির কপি ঠিকঠাকভাবে না পৌঁছনোয় এদিন শুনানি স্থগিত করে দেওয়া হয়। পরবর্তী শুনানি মঙ্গলবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.