শুভঙ্কর বসু: করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) আয়োজন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্য সরকারকে। দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে ৫০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান নিয়ে হাওড়ার এক বাসিন্দার দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য। সূত্রের খবর, বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। শুক্রবারের মধ্যে এর জবাব চেয়েছে আদালত। ওইদিনই পরবর্তী শুনানি।
সংক্রমণের আশঙ্কায় অক্টোবরে রাজ্যের স্কুল, কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। নভেম্বর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খোলা হলেও অনলাইন ক্লাসে জোর দেওয়া হচ্ছে। করোনা কালে বাতিল হয়েছে অন্যান্য অনেক উৎসব। অন্যান্য রাজ্যেও বাদতিল হয়েছে নানা উৎসব। তাহলে এ রাজ্যে দুর্গাপুজো করার অনুমতি কেন দেওয়া হল? আর আর্থিক অবস্থার বেহাল দশায় কেন ক্লাবগুলোকে পুজো করার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে? এই নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC) একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন হাওড়ার বাসিন্দা অজয় কুমার দে।
এদিন সেই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে একাধিক প্রশ্ন করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, পুজোর অনুমতি তো দেওয়া হল। কিন্তু ভিড় হলে কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করবে রাজ্য। এর উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান যে পুজোর আয়োজনে একাধিক বিধিনিষেধ দিয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন প্রকাশ করেছে রাজ্য। ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পুরোপুরি পুলিশের দায়িত্বে। তারাই এ ব্যাপারে কড়া নজরদারি চালাবেন, ভিড় সামলাবেন। এরপর বিচারপতি জানতে চান, ক্লাবগুলোকে পুজো করার জন্য কেন এত টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে? এতে রাজ্যের জবাব, করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষিতভাবে পুজোর আয়োজন করতে মাস্ক, স্যানিটাইজার-সহ অন্যান্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার বাড়তি খরচ হিসেবে ক্লাবগুলোকে এই আর্থিক সাহায্য। তাতে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, অন্যান্য উৎসবে কি এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল? অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এর জবাবে বাঙালির সেরা উৎসবের মাহাত্ম্য হিসেবে এর সর্বজনীন দিকের কথা তুলে ধরেন। এও বলেন যে বাঙালির আবেগ মাথায় রেখে যথেষ্ট কড়া নিয়মনিষেধের মধ্যে রাজ্য সরকার পুজোর আয়োজনে অনুমতি দিয়েছে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের এসব উত্তরে সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, সুরক্ষাবিধি বজায় রাখার জন্য যে ক্লাবকে আলাদাভাবে আর্থিক অনুদান, তা কি রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে খরচ করতে পারত না? মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এই মোটা অঙ্কের টাকা জমা করা যেত না? এছাড়া যেখানে সংক্রমণের আশঙ্কায় স্কুল, কলেজ পর্যন্ত খোলা হল না, সেখানে কীভাবে দুর্গাপুজোর আয়োজন হচ্ছে? বিচারপতি আরও প্রশ্ন তোলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কি এটা সম্ভব যে কোনও নির্দিষ্ট একটি উৎসব করোনা সুরক্ষাবিধি মেনে আয়োজন করতে রাজ্যের আর্থিক সাহায্য থাকবে, অথচ অন্য কোনও উৎসবে এমনটা হল না? এসবের সদুত্তর দিতে পারেননি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। সবমিলিয়ে, এদিন আদালতের বেশ ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হল রাজ্য সরকারকে। শুক্রবারের মধ্যে সমস্ত জবাব চেয়েছে হাই কোর্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.