গোবিন্দ রায়: কোন শিক্ষিকা কী ধরনের পোশাক পরবেন তা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ঠিক করে দিতে পারে না। দক্ষিণ ২৪ পরগণার স্কুল শিক্ষিকার পোশাক ফতোয়া বিতর্ক মামলায় জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। পোশাক নিয়ে ফতোয়া জারি প্রসঙ্গে শুক্রবার বিস্ময় প্রকাশ করে আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায়ের মত, সালোয়ার কামিজে কোনওরকম অশ্লীলতা নেই। সর্বত্রই এই পোশাক চলছে। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নির্দেশেও বলা আছে পোশাকের মধ্যে শালীনতা থাকলে সেই পোশাক পরতে পারবেন। এনিয়ে চার সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শককে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে পুনরায় ওই শিক্ষিকা যাতে কাজ শুরুর করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শিক্ষিকার আইনজীবী আশিস কমার চৌধুরী জানান, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুর প্রফুল্ল বালিকা বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষিকা। অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ফতোয়া জারি করেন, স্কুলে আসতে হলে শাড়ি পরে আসতে হবে। ওই শিক্ষিকা জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। কারণ, তাঁকে বাঁশদ্রোণী থেকে বাসন্তী প্রতিদিন বাসে, ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়, তাই প্রতিদিন স্কুলে শাড়ি পরে আসা সম্ভব নয়।
অভিযোগ, তর্কাতর্কির মধ্যেই অভিভাবকদের একাংশের উপস্থিতিতে বেশ কিছু শিক্ষিকা তাঁকে চূড়ান্ত হেনস্তা করেন। তাঁকে মারধর করে মাথার চুল কেটে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই শিক্ষিকা। পরে পুলিশ তাঁকে স্কুল থেকে উদ্ধার করে। এরপর থেকে ওই শিক্ষিকাকে আর স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আশিসকুমার চৌধুরীর দাবি, ওই শিক্ষিকাকে স্কুল চত্বরের মধ্যেই হেনস্তা করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কারোর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বরং হেনস্তা করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতা থাকার পর কুল তার খোঁজ নেয়নি। তার বিরুদ্ধে কোনও ডিসিপ্লিনারি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ তার বেতন বন্ধ করে দেয়। ঘটনার জেরে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকেন শিক্ষিকা। পরে শিক্ষা দপ্তরের দ্বারস্থ হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। পরে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.