Advertisement
Advertisement

চাইল্ড কেয়ার লিভের জন্য শিক্ষিকার বেতন বন্ধ, পৌরুষতন্ত্রের ঔদ্ধত্য বলল কোর্ট

হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন।

Calcutta HC slams School Authority

ছবি: প্রতীকী

Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:December 7, 2018 9:47 am
  • Updated:December 7, 2018 9:47 am  

শুভঙ্কর বসু: আদালতে মামলা করার কারণে জব্দ করতে চাইছে কর্তৃপক্ষ। যা ভারতীয় সমাজে পুরুষতন্ত্রের হাতে মহিলা নিপীড়নের চিরপরিচিত ছবি। চাইল্ড কেয়ার লিভ নেওয়ার ‘অপরাধে’ শিক্ষিকার এক মাসের বেতন স্থগিত রেখেছিল স্কুল। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। যে কথা জেনে হাই কোর্টের ভরা এজলাসে এমনই আক্ষেপ বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দে্যাপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, স্বাধীনতার ৭১ বছর পরও সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর ধারার কথাগুলি খাতায় কলমেই বন্দি থাকছে শুধু। বাস্তবে কোনও প্রতিফলন নেই। ২০১৭-র ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চাইল্ড কেয়ার লিভের আবেদন জানান শিক্ষিকা শিখা সরকার। ছুটি মঞ্জুর না হওয়ায় তিনি স্কুল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ছুটি না নিলেই নয় এই পরিস্থিতি হওয়ায় ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলে আসা বন্ধ করে করে দেন শিখাদেবী। এর মাস খানেক পর চাইল্ড কেয়ার লিভ কাটিয়ে স্কুলে যোগ দিতে গেলে তাঁকে জানানো হয়, ছুটি মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও ছুটি কাটানোয় মৃদু শাস্তি হিসাবে তাঁর এপ্রিল মাসের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

[সাতদিন পর নাবালিকার বিয়ে বাতিল ঘোষণা করল প্রশাসন]

Advertisement

স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি শিখাদেবী। কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনও ফল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। বেশ কয়েক দিন শুনানির পর শিক্ষিকার বেতনের বিষয়টি বিবেচনা করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি নিস্পত্তি করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। আদালতের এহেন নির্দেশের পরও কোনও লাভ হয়নি। উলটে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে নিয়োগ করে। হাই কোর্টের নির্দেশ না মেনে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২০ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়, চাইল্ড কেয়ার লিভ দেওয়া বা না দেওয়াটা সম্পূর্ণ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। এটা আইনত সিদ্ধ অধিকার হতে পারে না। কর্মস্থলের ভারসাম্য অনুযায়ী ছুটি মঞ্জুর করা হয়। ছুটি মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও ছুটি নেওয়া ও এক মাসের বদলে ৪২ দিন ছুটি কাটানোয় এক মাস বেতন বন্ধের মৃদু শাস্তি বহাল রাখছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কোনও উপায় না দেখে ফের আদালতে ছোটেন শিখাদেবী। তিনি আদালত অবমাননার মামলা ঠোকেন। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় আক্ষেপের সুরে বলেছেন, “মহিলা বলেই বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আদালতে মামলা করায় শিক্ষিকাকে জব্দ করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল। কিন্তু তেমনটা করার আগে তাঁরা সংবিধানের ১৫ নম্বর ধারা ভুলে গিয়েছেন। রায়ে বিচারপতি লিখেছেন, “এটা বড়ই দুঃখের কথা পুরুষতান্ত্রিকতা বজায় রাখতে এখনও অনেকে মনে করেন, মহিলাদের জায়গা ঘরের অন্দরে। পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার কোনও অধিকার তাঁদের নেই। তাঁরা ঘর গোছাবে, রান্না করবেন, বাচ্চা মানুষ করবেন কিংবা স্বামীর সেবা করবেন। এটাই স্বাভাবিক।”

[বিজেপির রথযাত্রার অনুমতি দিল না হাই কোর্ট]

সংবিধানের ১৫ নম্বর ধারায় মহিলাদের জন্য বেশ কিছু বিশেষ সংস্থান রাখা হয়েছে। চাইল্ড কেয়ার লিভও তার মধ্যে পড়ে। সেই ছুটি পেতে যদি একজন মহিলাকে অপেক্ষা করতে হয় তাহলে সেটা সংবিধানের পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। বুঝতে হবে তাহলে ৬৮ বছর ধরে সংবিধান সংস্কারের পরও পুরুষতান্ত্রিকতার ধারণা সব ক্ষেত্রেই অক্ষরে অক্ষরে বজায় রয়েছে। তাই পুরুষের সঙ্গে মহিলাদের সমমর্যাদা দিলেও আসল উদ্দেশ্য অধরাই থেকে যাচ্ছে।” স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও কঠোর নির্দেশ দেননি বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের বোধোদয়ের জন্য এব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে দু’মাস সময় দিয়েছেন। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক তা জানাতে হবে আদালতকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement