স্টাফ রিপোর্টার: কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে রাজনীতির সরাসরি সংযোগ রয়েছে, সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের সম্মান এবং মর্যাদা দেওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। পাশাপাশি, শিক্ষা বিষয়ক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সৎ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলেই মত কলকাতা হাই কোর্টের।
সম্প্রতি এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন ওই কলেজেরই ছাত্র সংগঠনের সম্পাদক। দায়ের হওয়া ওই মানহানির মামলা গত সপ্তাহে খারিজ করে শিক্ষক-ছাত্রের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে আদালত। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কেমন আচরণ মেনে চলতে হবে, সেটি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি শম্পা দত্ত (পাল)। সেই সঙ্গেই যে কোনও বিষয়ে রাজনীতি না টেনে আনার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। বিচারপতির মতে, কলেজে পঠন-পাঠনের পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বা গবেষণামূলক বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উচিত পড়ুয়াদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাতে দুপক্ষের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে। এরই সঙ্গে আদালতের নির্দেশনামায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আদর্শ আচরণের মধ্যে পড়ুয়াদের সম্মান, যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব, সততা, পারস্পরিক সহযোগিতা, ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতা, প্রাতিষ্ঠানিক নীতি মেনে চলা-সহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিচারপতি।
মামলাকারীর আইনজীবী অপলক বসু জানান, ২০১৫ সালে হুগলি উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে আবেদনকারী ওই শিক্ষিকা সীমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে বেশ কিছু কাল্পনিক ষড়যন্ত্র নিয়ে মিথ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে হুগলি উইমেন্স কলেজের একটি অনুষ্ঠানে আবেদনকারী শিক্ষিকা এক প্রকাশ্য সাক্ষাৎকারে কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনাও করেন। অধ্যক্ষের দাবি, ওই সাক্ষাৎকারটি ওই বছরেরই আগস্ট মাসে একটি প্রথম সারির সর্বভারতীয় সংবাদ চ্যানেলে দেখানো হয়। সেখানে কলেজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আবেদনকারী সমালোচনা করেন এবং অভিযোগকারী শিক্ষক ও প্রিয়াঙ্কা অধিকারীর নাম নেন। প্রিয়াঙ্কা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক ও কলেজের তৃণমূল ছাত্র সংসদের সম্পাদক। কলেজের মধ্যে হওয়া নানান অবৈধ কাজের মূল পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তাঁর নাম নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। যা নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের হয়। মানহানির অভিযোগ খারিজের আবেদনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
ওই মামলাতেই ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক ঠিক রাখতে শিক্ষার্থীদের মর্যাদা ও সুবিচার দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা তুলে ধরে শিক্ষার সহায়ক পরিবেশকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে দুপক্ষের সম্পর্ক মধুর হবে বলেই মত হাই কোর্টের। শুধু তাই নয়, ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক তৈরিতে রূপরেখায় আদালত জানিয়েছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ভালো পরিবেশ রাখতে হবে, পড়ুয়াদের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে বিষয়গুলি পড়াতে হবে, শিক্ষা পদ্ধতির দিকেও নজর দিতে হবে। বিচারপতির মতে, পড়াশোনার পাশাপাশি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। শুধুমাত্র ভাল পড়ালেই চলবে না। কলেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সব বিষয়েই স্বচ্ছতা রাখতে হবে। এছাড়াও, ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ও কলেজের অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.