সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দিলে জেলাশাসক ও বিডিওর বেতন বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। জানা গিয়েছে, বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। রাজ্য সরকারের প্রকল্প অনুযায়ী দু লক্ষ টাকা অনুদান পাওয়ার কথা ছিল মৃতের পরিবারের। তবে দীর্ঘদিন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনও টাকাই মেলেনি তাদের। বাধ্য হয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মৃতের স্ত্রীর। অভিযোগ, বিচারপতির নির্দেশ সত্ত্বেও মেলেনি টাকা। এরপরই ৭ দিনের মধ্যে মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ না দিলে জেলাশাসক ও সোনারপুরের বিডিও-এর বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ভবেশ মণ্ডল। জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে বাগানে কাজ করার সময় তাঁকে সাপে কামড়ায়। তড়িঘড়ি তাঁকে চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে গোটা পরিবার। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন মৃতের স্ত্রী সুন্দরী মণ্ডল।এরপর ২০১৬ সালে সুন্দরী জানতে পারেন, রাজ্য সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যদি কেউ সাপের কামড়ে বা বজ্রপাতে মারা যান এবং তিনি যদি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হন, তাহলে তাঁর পরিবার ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টাকার জন্য আবেদন জানিয়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন মৃতের স্ত্রী। জানা গিয়েছে, সোনারপুরের বিডিও, জেলাশাসক থেকে বারুইপুরের এসডিও- সব দপ্তরেই যান সুন্দরী। অভিযোগ তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে জেলাশাসককে একটি চিঠি লিখে বিষয়টি জানান তিনি। এরপরেও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেন তিনি। টাকা না মেলায় বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা। বিচারপতি দেবাংশু বসাক বিষয়টি শোনার পর দ্রুত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন ডিএমকে।
জানা গিয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশ পেয় জেলাশাসক, সোনারপুরের বিডিও-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পর বিডিও জানান যে ভবেশ মণ্ডলের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা আছে, সাপের কামড়েই মৃত্যু হয়েছিল ওই ব্যক্তির। অভিযোগ, এরপরও অনিবার্য কারণে ক্ষতিপূরণের টাকা মেলেনি। এরপর ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ফের জেলাশাসককে চিঠি লেখেন সুন্দরী। তিনি জানান, বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন ১ মাসের মধ্যে টাকাটা যাতে পান তার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই করা হয়নি। শেষে ফের হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলার আইনজীবী।
শুক্রবার ফের মামলাটি বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে ওঠে। মামলাকারীর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরি ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেন। পুরো ঘটনা শোনার পর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি দেবাংশু বসাক। তিনি নির্দেশ দেন, “আগামী ৭ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে যদি ওই মহিলা টাকা না পান তাহলে জেলাশাসক ও সোনারপুরের বিডিওর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে।” বিচারপতির নির্দেশ শুনে কিছুটা স্বস্তিতে মৃতের পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.