গোবিন্দ রায়: স্যাটের নির্দেশ খারিজ। রাজ্য পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সংরক্ষণ আইনকেই মান্যতা দিল কলকাতা হাই কোর্ট। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্য পুলিশে কনস্টেবলের ৮৪১৯ পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড। তার ভিত্তিতে ওই বছর ৪ আগস্ট পরীক্ষা হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে মেধাতালিকা ও পরে চূড়ান্ত মেধাতালিকা (প্যানেল) প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ১০ মার্চ ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে (স্যাট) মামলা করা হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই আগের প্যানেল বাতিল করে জেনারেল ও সংরক্ষিত তালিকা আলাদা আলাদা করে নতুন করে প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দেয় স্যাট। বুধবার নিম্ন আদালতের এই নির্দেশ খারিজ করে এনিয়ে আগের প্যানেলকেই মান্যতা দিয়েছে হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন জানিয়েছে, এই প্যানেলের পরিবর্তে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ প্রকাশিত প্যানেল বৈধ বলে গণ্য হবে। এছাড়াও নিয়োগের পরীক্ষায় যেসব এসসি, এসটি ও অন্য শ্রেণির সংরক্ষিত প্রার্থীরা জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীদের থেকে বেশি নম্বর পেয়েছেন, তাঁদের জেনারেল প্রার্থী হিসেবে গ্রহন করতে হবে। আগের প্যানেল অনুযায়ী ইতিমধ্যেই মোট শূন্য পদের ২০০ টি আসন ফাঁকা আছে। ফলে নতুন প্যানেল অনুযায়ী যেসমস্ত সংরক্ষিত তালিকার প্রার্থীর নাম বাদ চলে গিয়েছে তাঁদের নিয়োগে কোনও সমস্যা হবে না বলে মত আইনজীবী মহলের।
রাজ্যের সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, চূড়ান্ত মেধাতালিকায় এসসি, এসটি সংরক্ষিত প্রার্থীরা যদি জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীদের থেকে বেশি নম্বর পায়, তাহলে সংরক্ষিত তালিকায় থাকা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে জেনারেল চাকরিপ্রার্থীদের তালিকায় জায়গা দিতে হবে। কিন্তু এই আইনের বিরোধিতা করে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বেশ কিছু জেনারেল প্রার্থী স্যাটের দ্বারস্থ হন। তাঁদের দাবি, সংরক্ষিত তালিকার প্রার্থীরা জেনারেল প্রার্থীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি পেলে তাঁদের জায়গা কমে যাবে। আরও যুক্তি, এক্ষেত্রে সংরক্ষিত তালিকার প্রার্থীরা দুই জায়গায় সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে, ফলে জেনারেল প্রার্থীদের সুযোগ কমে যাচ্ছে। তাই জেনারেল প্রার্থীদের জন্য আলাদা করে তালিকা করা হোক। এবং সংরক্ষিত প্রার্থীদের জন্য আলাদা তালিকা করা হোক। জেনারেল প্রার্থীদের আবেদন মেনে তুলনামূলক বেশি নম্বর থাকার সত্বেও সংরক্ষিত আসনের চাকরিপ্রার্থীকে সাধারণ তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সংরক্ষিত তালিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বোর্ডকে ট্রাইবুনাল নির্দেশ দেয়, চার সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্যানেল প্রকাশ করে নিয়োগের সুপারিশ দিতে হবে। ট্রাইবুনাল তাদের রায়ে বলেছিল, আইন মেনে সংরক্ষিত প্রার্থীদের তালিকাও আলাদা করে প্রকাশ করতে হবে। যদিও ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগের অভিযোগে সমগ্র নিয়োগপ্রক্রিয়া খারিজের আর্জিতে সাড়া দেয়নি ট্রাইবুনাল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইবুনালের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন সংরক্ষিত তালিকায় নিচের দিকে থাকা সম্পদ মণ্ডল-সহ কয়েকশো চাকরিপ্রার্থী। আদালতে তাঁদের দাবি ছিল, নতুন করে প্যানেল প্রকাশ হওয়ায় তুলনামূলক বেশি নম্বর থাকা প্রার্থীরা সংরক্ষিত তালিকার উপরের দিকে চলে আসে। যার জেরে তুলনামূলক কম থাকা নম্বর থাকা সংরক্ষিত তালিকার প্রার্থীরা প্যানেলের বাইরে চলে যান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.