শুভঙ্কর বসু: এক বছরে বেতন পাচ্ছেন না চিকিৎসক! চিকিৎসক বললে ভুল হবে তিনি আবার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাও (এসিএমওএইচ)। শুধু বেতন পাচ্ছেন না তাই নয়, এমনকি তাঁকে কাজেও যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ পেয়ে অবিলম্বে ওই চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্য অধিকর্তার পুরো বেতন-সহ সমস্ত বকেয়া চুকিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেইসঙ্গে তাঁকে কাজে যোগ দেওয়ারও ছাড়পত্র দিয়েছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
কিন্তু কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই স্বাস্থ্য অধিকর্তার সঙ্গে এমনটা ঘটেছে? নন্দীগ্রামে বিএমওএইচ পদে কর্মরত ছিলেন ওই চিকিৎসক। গতবছর জুলাইয়ে আলিপুরদুয়ারে এসিএমওএইচ হিসেবে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। নির্দেশ মতa তিনি এসিএমওএইচ পদে কাজে যোগ দেন। এবং দুমাস ওই পদে কাজ করেন। কিন্তু তাঁকে এসসিএমওএইচ হিসেবে বেতন দেওয়ার পরিবর্তে বিএমওএইচ হিসেবে বেতন দেওয়া হয়। এর মাঝেই হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর যথাযথ কারণ দেখিয়ে জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও হেলথ ডিরেক্টরকে ছুটির আবেদন জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে এর কোনও উত্তর মেলেনি। একবার নয়, একাধিকবার আবেদন জানালেও কর্তৃপক্ষের তাঁকে কিছু জানায়নি বলে অভিযোগ। অথচ শারীরিক কারণে বাধ্য হয়ে তিনি কাজে যোগ দিতে পারেননি। এরপর গত অক্টোবরে তাঁকে একটি শোকজ নোটিস ধরানো হয়। যেখানে তাঁর কাছ থেকে একাধিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
শুধু তাই নয়, কোনও কারন ছাড়াই অক্টোবর মাস থেকে তার বেতন, হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স-সহ যাবতীয় সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং এর মাঝেই তাঁকে আলিপুরদুয়ার থেকে কোচবিহারের তুফানগঞ্জে এসিএমওএইচ হিসেবে বদলি করে দেওয়া হয়। কিন্তু আলিপুরদুয়ার থেকে কাগজপত্র হস্তান্তর না করায় তিনি তুফানগঞ্জে ওই পদে কাজে যোগ দিতে পারছিলেন না। এরপর বাধ্য হয়েই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে শুনানিতে গোটা বিষয়টি আদালতে জানান তাঁর আইনজীবী গার্গী গোস্বামী। মামলার নোটিস পাওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।
গার্গীদেবীর বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি ভট্টাচার্য নির্দেশ দেন, বর্তমান মহামারী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে একজন চিকিৎসককে এভাবে কাজ থেকে বিরত রাখা যায় না। ফলে ওই স্বাস্থ্য অধিকর্তার অক্টোবর মাস থেকে বকেয়া বেতন ও যাবতীয় সুবিধা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। এবং আলিপুরদুয়ারে কাজে যোগ দেওয়ার পর তিনি যে পরিমাণ কম বেতন পেয়েছিল সেই বকেয়া অংশও মিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও তাঁকে তুফানগঞ্জে এসিএমওএইচ হিসাবে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যদপ্তরকে ১৫ দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। ৬ সপ্তাহ পর ফের মামলার শুনানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.