গোবিন্দ রায়: ১৯৪৭-এর তুলনায় আধুনিক যুগের নাবালিকারা অনেক পরিণত। এবার ১৫ বছরের নাবালিকাদের নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। স্বেচ্ছায় বা পরিবারের ইচ্ছায় ১৫ বছরের নাবালিকার বিয়ে নিয়ে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মত কলকাতা হাই কোর্টের।
মাঝেমধ্যেই শোনা যায় নাবালিকার বিয়ে রুখল পুলিশ। কখনও নাবালিকা তার প্রেমিকের সঙ্গে ভালবাসার টানে ঘর ছাড়ে। কখনও বা পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় পরিবার। আর গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই বিয়ে আটকায় পুলিশ। আবার ব্যতিক্রমও রয়েছে। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নাবালিকাকে নিজে হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে বিয়ে রুখতে শোনা যায়, আবার কখনও সহপাঠীদের সহযোগিতায় বিয়ে আটকায় চাইল্ডলাইন। এবার সেই প্রসঙ্গই উঠল কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court)।
এক নাবালিকার নিখোঁজ সংক্রান্ত মামলায় নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, ‘‘আধুনিক যুগে তাঁরা অনেক পরিণত। এখন আর তাঁদের সঙ্গে ১৯৪৭ সালের নাবালিকাদের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। এবার ১৫ বছরের নাবালিকাদের নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’ এ প্রসঙ্গে আইন উল্লেখ করে বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘এখন নাবালিকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় পারদর্শী। সেখান থেকে তারা সবকিছু জানতে পারেন। কিন্তু সাবালিকা হওয়ার আগে বিবাহ আইনত অপরাধ। তাই ১৫ বছরের নাবালিকারা স্বেচ্ছায় যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাতে বিচারব্যবস্থা অনেক সময় অসুবিধার মুখে পড়ছে। প্রচলিত আইনকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আবার আদালতের পক্ষে আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়।’’ তাই এ বিষয় নিয়ে এবার ভাবা উচিত বলেই মত বিচারপতি মান্থার।
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনও পরিবর্তন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আইন প্রণেতাদের ভাবতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার আগেই ছেলেমেয়েরা খোলামেলা মেলামেশা করছে। তাঁরা আইন না জেনেই একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তাঁদের আইনে আটকে রাখাও সম্ভব নয়।’’ তবে তাঁর দাবি, ‘‘কোনও আইন ব্যবহারের থেকে অপব্যবহার হয় বেশি। তাই নাবালক-নাবালিকাদের যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে তৈরি প্রিভেনশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস বা পকসো আইনের উপর যাতে প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে।’’ এদিকে, আলিপুর পকসো আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মাধবী ঘোষ বলেন, ‘‘১৮৭২ বা ১৯৫৪ সালের বিবাহ আইনের বিষয় নিয়ে আইন প্রণেতারা ভাবতেই পারেন। কিন্তু সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার বয়স যদি কমে, তাহলে সামাজিক অবক্ষয় হবে।’’
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ার বাসিন্দা পেশায় টোটো চালক, এক যুবকের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে স্থানীয় নাবালিকা সাবিনার (পরিবর্তিত নাম)। তবে সাবিনার বয়স ১৫ বছর। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সাবিনা হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। মামলা গড়ায় হাই কোর্টে। আদালতে নাবালিকার পরিবারের দাবি, সাবিনাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিবাহ করে ধর্ষণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হায়দরাবাদে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিবাহ করে। ঘটনায় হাওড়া গ্রামীণের রাজাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পরে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় সাবিনাকে হায়দরাবাদ থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে, আগাম জামিনের আবেদনে ওই যুবক আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। আগাম জামিনের পর থেকেই ওই যুবক ফের হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। পুলিশকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় ফের সাবিনার পরিবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
যদিও আদালতে পুলিশ ও অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, ‘‘তাদের ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। নবালিকা গোপন জবানবন্দিতে সে কথা স্বীকারও করেছে। সে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে বিবাহ করেছিল বলে জানিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.