শুভঙ্কর বসু: গিট আলগা করতেই রে রে করে তেড়ে এসেছে। একেবারে অন্দরে থাবা বসিয়েছে করোনা। একের পর এক শীর্ষ আধিকারিক আক্রান্ত হয়েছেনই। আরও কত জনের শরীরে এই মারন ভাইরাস বাসা বেঁধেছে তাও অজানা। তাই এখনই কলকাতা হাই কোর্টের ফের সশরীরে শুনানি চালু হলে অবস্থা যে আরও মারাত্মক হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তা বলে বিচারপ্রক্রিয়া তো থেমে থাকতে পারে না? তাই আগামী কয়েক মাস ভারচুয়াল শুনানি ছাড়া গতি নেই। সেকথা মাথায় রেখেই এবার ব্যবস্থা নিতে চলেছে হাই কোর্ট প্রশাসন। ভারচুয়াল শুনানিতে আরও গতি আনতে এবার উন্নত মানের এইচডি ক্যামেরা কিনছে কলকাতা হাই কোর্ট। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই দরপত্র ডেকেছে হাই কোর্ট কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্যামেরা বিক্রেতা কোম্পানিগুলিকে সত্বর যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
শুধু এ রাজ্যের শীর্ষ আদালতই নয়, দেশের কোনও আদালতই ভারচুয়াল শুনানির জন্য প্রস্তুত ছিল না। খানিকটা পরিস্থিতির শিকার হয়েই এই পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়েছে সকলে। ফলে যথাযথ প্রস্তুতি না থাকাটাই স্বাভাবিক। কলকাতা হাই কোর্টে এতদিন ল্যাপটপ ও সাধারণ ক্যামেরার মাধ্যমে অনলাইন শুনানি চলছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিস্তর সমস্যা হচ্ছিল। ভাল ক্যামেরা ও সাউন্ড সিস্টেমের অভাবে ব্যাপারটা মার খাচ্ছিল। নিত্য অসুবিধায় পড়ছিলেন বিচারপতিরা। সে কারণেই এবার উন্নত মানের ক্যামেরা কিনতে চাইছে হাই কোর্ট কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে বলা হয়েছে, ওয়েব কলিংয়ের জন্য ইউএসবি সিস্টেম সহ ল্যাপটপ, এলসিডি ও সিআরটি মনিটরে সংযুক্ত করা যায় এমন আটটি এইচডি ক্যামেরা প্রয়োজন। ক্যামেরাগুলিতে প্যান, টিল্ট ও জুমের সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক। যদিও ভার্চুয়াল শুনানি কখনওই সশরীরে শুনানির বিকল্প হতে পারে না। একথা মানছেন অনেকেই। লকডাউন ও আনলক পিরিয়ডে সবচেয়ে বেশি ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নিয়েছেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “ভারচুয়াল শুনানিতে টু দ্য পয়েন্ট বলতে হয়। সেজন্য মামলাটি সবসময়ই নখদর্পণে রাখা প্রয়োজন। না হলে অনেক সময় প্রকৃত অপরাধীরও পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।”
পাশাপাশি আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ, অনলাইনে সওয়ালের বিষয়ে এখনও অনেকেই সড়গড় নন। আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরির বক্তব্য, “বিষয়টি যেহেতু এখনও অনেকেরই অজানা। তাই এ ব্যাপারে বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশনগুলি ও হাই কোর্ট কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উদ্যোগী হয়ে একটি ওয়ার্কশপ বা অনলাইন প্রেসেন্টেশন করলে তাতে সকলেই উপকৃত হবেন। পাশাপাশি নতুন ব্যবস্থায় প্রথম প্রথম ভুলভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিচারপতিরা একটু উদার হলে আইনজীবী ও মক্কেল সকলের পক্ষেই তা মঙ্গলজনক হবে।”
তবে অনলাইন শুনানি নিয়ে কম বাকবিতণ্ডা হয়নি। হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ আংশিক সশরীরে শুনানি চালু করতে চাইলেও তাতে একযোগে আপত্তি জানায় আইনজীবীদের তিনটি সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি এবং ইনকর্পোরেটেড ল সোসাইটি। তারা ভারচুয়াল শুনানির পক্ষেই মত দেয়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় নিজ দায়িত্বে সশরীরে শুনানিতে অংশ নেবেন আইনজীবীরা। কিন্তু সশরীরে শুনানি শুরু হতেই বিপত্তি বাধে। একসময় আইনজীবীদের ভিড় সামলাতে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এজলাস ছেড়ে উঠে আসতে দেখা যায়। এসব অভিজ্ঞতা নিরিখেই আগামী দিনে ভারচুয়াল শুনানিতেই আরও জোর দিতে চাইছে হাই কোর্ট কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.