রাহুল রায়: কোনও চলচ্চিত্র বা প্রবন্ধের গল্প নয়। বাস্তবে এক সন্তানের প্রতি তাঁর সৎ মায়ের বঞ্চনার ঘটনা। যে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি রাজ্য, সেই দায়িত্বই নিল আদালত। সংবিধানে পিছিয়ে পরা শ্রেণির সমস্যার সমাধান করা রাজ্যের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব অবশ্য নিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। সাঁওতাল ঘরের ছেলে পড়াশোনা থেকে থাকার বন্দোবস্ত করে দিলেন বিচারপতি।
ঘটনার শুরু ২০১৫ সালে। আগেই রোগ ভোগে মারা গিয়েছিলেন নন্দদুলাল (নাম পরিবর্তিত)-এর মা রমা। পরে রহস্যজনকভাবে মারা যান বাবা বংশী টিঙ্গুয়াও। মা মারা যাওয়ার পর পেশায় প্রাথমিক স্কুলে অশিক্ষক কর্মী হিসেবে কর্মরত বাবা আবার বিয়ে করেন। পরে বাবাও মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সেই চাকরি পান সৎ মা। শর্ত ছিল, চাকরি পেয়ে পরিবারের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু কিছু দিন দেখার পর থেকেই সৎ মায়ের বঞ্চনার শিকার বছর চোদ্দর নন্দদুলাল। শুধু সে-ই নয়, এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েন তাঁর বৃদ্ধ ঠাকুরদাদাও। দাদু-নাতির ঠাঁই হয় গাছ তলায়, ত্রিপল টাঙিয়ে। সংসার চালাতে বা পেরে বৃদ্ধ দয়ানাথ খোরপোশ চেয়ে আদালতের (Calcutta High Court) দারস্থ হন।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে এই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সব শুনে জানতে চান নাতি ও দাদু কোথায় থাকেন? তাঁদের বাসস্থানের ছবি দেখে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান বিচারপতি। পূর্ব মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম ছত্রী এলাকায় একটি বটগাছের তলায় কোনক্রমে ত্রিপল খাটিয়ে আছেন তাঁরা। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিশেষ সুবিধাটুকুও তাঁরা পান না বলে অভিযোগ। এরপরেই জেলাশাসককে ডেকে আদালত নির্দেশ দেয়, প্রকল্প অনুযায়ী বাড়ি বানিয়ে দিতে। নির্দেশের পর পাকা বাড়ি পেয়েছে ওই পরিবার। এখন শুধু ঘরে ওঠার অপেক্ষা। শুধু তাই নয়, সেই সময় সমীরকে স্কুলে ভরতি করে দেন বিচারপতি। মাধ্যমিকে এবছর সে আশি শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। এদিন ভরা এজলাসে যা শুনে আপ্লুত বিচারপতি (Abhijit Ganguly)। নন্দর উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, “ভালো করে পড়াশোনা করো। আমরা সকলে তোমার সঙ্গে আছি।” আদালত জানায়, তাঁর সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এই মামলা আদালতের নজরদারিতে থাকবে।
তবে সৎ মায়ের বিরুদ্ধে লড়াই শেষ হয়নি। আদালতে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও গত চার মাস ধরে সৎ মা পিঙ্কি কেন টাকা দেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত। এদিন সৎ মায়ের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। পাশাপশি, মামলার পরবর্তী শুনানি তাঁকে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তিনি উপস্থিত না হলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আনারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর হাজিরা সুনিশ্চিত করতে পূর্বমেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৩০ আগস্ট।
এদিন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য বিচারপতি গোটা ঘটনার বিবরণ দেন। এবং বলেন এটা সঠিক হচ্ছে? বিকাশবাবু জানান, “সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।আদালতের কাছে এটাই প্রত্যাশা করেন মানুষ। যেখানে সরকার ব্যর্থ, সেখানে আদালতকে এগিয়ে আসতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.